মুম্বই: নর্দমার ময়লা ঘাঁটলেন,সেপ্টিক ট্যাঙ্কে মল ঘাঁটালেন! আর এভাবেই নগদ ৫৭,০০০ টাকা উদ্ধার করলেন দুর্নীতি দমন শাখা বা এসিবি-র অফিসাররা। মহারাষ্ট্রের দহিসরের ঘটনা। বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের এক পদস্থ কর্তা পা ফেলেছিলেন মহারাষ্ট্র পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার পাতা ফাঁদে। তবে, বিপদ বুঝে তিনি কমোডে ফ্লাশ করে দেন ঘুষের টাকা। আর তাতেই মল ঘাঁটতে হল দুর্নীতি দমন শাখার কর্তাদের।
ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার। বোরিভালির এক রেস্তোরাঁ গ্যাসের সংযোগ পেতে বৃহন্মুম্বই ফায়ার ব্রিগেড পোর্টালের মাধ্যমে একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের (এনওসি) আবেদন করেছিল। এর জন্য রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে তাঁর অফিসে ডেকেছিলেন বিএমসির সিনিয়র ফায়ার অফিসার, প্রহ্লাদ শিতোলে। দহিসরের নিউ লিংক রোডে এক বহুতলের প্রথম তলায় তাঁর অফিস। ওই ভবনেরই চতুর্থ তলায় থাকেন তিনি।
অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে এনওসি ইস্যু করার জন্য ওই অফিসার ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। তিনি কিছু মুখে বলতেন না। একটি ক্যালকুলেটরে সংখ্যাটা টাইপ করে দেখিয়ে দিতেন। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ তা দিতে না চাওয়ায়, শিতোলের দাবি কমে ৮০,০০০ হয়। গত বুধবার, ফের তাঁর অফিসে দেখা করেছিলেন রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। ঘুষের দাবি আরও কমে যায়। প্রহ্লাদ শিতোলে জানান, ৫০ হাজার টাকার উপরে যে কোনও টাকা দিলেই হবে।
বৃহস্পতিবার রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ এসিবি-র হেড অফিসে এই বিষয়ে একটি অভিযোগ জানান। অভিযোগটি যাচাই করে দুর্নীতি দনম শাখা ফাঁদ পাতার সিদ্ধান্ত নেয়। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসিবির অফিসাররা শিতোলেকে ফোন করে বলেন, ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে সম্মত তারা। এরপর, সমস্ত নোটের ক্রমিক নম্বর তারা রেকর্ড করেন। শুধু তাই নয়, নোটগুলির উপর ফেনোলফথালিন পাউডারের প্রলেপ দেন। এসিবির এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, ওই নোট কেউ ধরলে, তার হাতে ওই পাউডার লেগে যায়। তারপর সেই হাত একটি বিশেষ দ্রবণে ডোবালে হাতে গোলাপী রঙ হয়। এটা আদালতে প্রমাণ হিসাবে পেশ করা যায়।
গত শুক্রবার, এসিবির দেওয়া এই নোটগুলি নিয়ে শিতোলেকে ঘুষ দিতে যায় রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। শিতোলে তাঁদের লিফটে ডেকে নিয়ে যান। সেখানেই তিনি ঘুষের টাকা নেন। এসিবির কর্তারা তার অফিসের চারপাশে লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু, শিতোলে কিছু একটা সন্দেহ করেছিলেন। তাই তিনি অফিসে না গিয়ে, নিজের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর টয়লেটে গিয়ে নোটগুলি কমোডে ফ্লাশ করে দিয়েছিল।
শিতোলেকে অফিসে না পেয়ে এসিবির কর্তারা তার বাড়িতে হানা দেয়। এরপর শিতোলেকে হেফাজতে নেওয়া হয়। জেরার মুখে শিতোলে জানান, ভয়ে তিনি নোটগুলি কমোডে ফ্লাশ করেছিলেন। কিন্তু, আদালতে তাঁর অপরাধ প্রমাণ করতে হলে, ঘুষের টাকা পুনরুদ্ধার করতেই হত এসিবিকে। তাই এরপর, এসিবি অফিসাররা প্লাম্বারের শরনাপন্ন হন। ওই ভবনের সেপটিক ট্যাঙ্ক এবং এলাকার প্রায় ২০টি নর্দমা ড্রেজ করে ৫৭,০০০ টাকা উদ্ধার হয়। বাকি ৩০০০ টাকার হদিশ পাওয়া যায়নি। শিতোলের শার্ট, বাথরুমের দরজার হাতল এবং বাড়ির প্রধান দরজায় ফেনোলফথালিন পাউডারও পাওয়া গিয়েছে। এরপরই শিতোলেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে এবং বিএনএস আইনে প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)