কলকাতা: ১৯৪৭। ভারতের মাটি থেকে ব্রিটিশদের (British in India) বুটের চিহ্ন মুছে গেল। বম্বে থেকে শেষ ব্রিটিশ ফৌজ ভারত ছেড়ে স্বদেশের পথে রওনা হল। ১৪ অগস্ট রাতে দিল্লিতে (Delhi) ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন জওহরলাল নেহরু। নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করল ভারত। সেদিন নেহরু বলেছিলেন, “বহুপূর্বে আমরা আমাদের ভবিতব্য তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। এখন প্রতিজ্ঞা পালনের সময় এসেছে। মধ্যরাতে যখন গোটা বিশ্ব ঘুমিয়ে তখন ভারত প্রাণ ও মুক্তিতে জেগে উঠবে।” ৭৬ বছর পর সে অগস্টেরই এক সন্ধ্যায় চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে পৌঁছল স্বাধীন ভারতের বিজ্ঞান। চাকা গড়াল প্রজ্ঞানের। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অনুসন্ধান শুরু করেছে ভারতের রোভার। জমাট জল আর খনিজের খোঁজ চলছে। এটাই এখন হজম হচ্ছে না রক্ষণশীল ব্রিটিশ সমাজের একাংশের।
এক ব্রিটিশ নিউজ চ্যানেলের সঞ্চালত প্যাট্রিক ক্রিস্ট চরম বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে নামার জন্য ভারতকে অভিনন্দন। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ২৩০ কোটি বৈদেশিক অনুদান তারা নিয়েছে। তা এবার ফিরিয়ে দিক। আগামী বছরও ৫৭ লক্ষ পাউন্ড অনুদান পাওয়ার কথা ভারতের। ব্রিটিশ করদাতারা খেয়াল করুন। নিয়ম অনুযায়ী কারও মহাকাশ গবেষণার জন্য আমাদের অনুদান দেওয়া উচিত নয়। চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে রকেট পাঠাতে পারলে আমাদের সামনে হাত পাতা উচিত নয়।” তাঁর এ মন্তব্য নিয়েই উঠেছে নিন্দার ঝড়। প্রশ্ন উঠছে, ব্রিটেন কী ভারতকে সত্যিই অনুদান দিয়েছে?
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতকে ২৩০ কোটি পাউন্ড দিয়েছে ব্রিটেন। দ্বিপাক্ষিক অনুদান হিসাবে ৪০ কোটি ১০ লক্ষ পাউন্ড অনুদান। কমনওয়েলথ চুক্তিতে ১২ কোটি ৯০ লক্ষ পাউন্ড লগ্নি। এই কমনওয়েলথ চুক্তিতে লগ্নি করা অর্থ সুদ সহ ফেরানো হয়। এ ছাড়া ৭০ কোটি ৪৯ লক্ষ পাউন্ড বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নি করা হয়েছে। ব্রিটিশ ভারত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে লগ্নি ১০০ কোটি পাউন্ড। অর্থাৎ, ব্রিটিশরা নিজের স্বার্থে পাউন্ড ঢেলেছে। কোনও দয়া করেনি। কিন্তু, ব্রিটিশ সঞ্চালক এমনভাবে বিষয়টিকে উল্লেখ করছেন যেন ভারত ব্রিটেনের থেকে ভিক্ষা নিয়েছে। একইসঙ্গে ভারতে কত সংখ্যক মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছে তা উল্লেখ করেও বিষ উগরে দিয়েছেন ব্রিটিশ সঞ্চালক।
এদিকে এই নিউজ ক্লিপ ভাইরাল হতেই ভারতের নেট নাগরিকরা আবার ব্রিটিশ লুঠের তথ্য তুলে ধরে কড়া জবাব দিয়েছেন। নেটিজেনরা জবাবে বলছেন, ব্রিটিশরা ভারত থেকে কোহিনুর লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ভারতে লুঠেছে ব্রিটিশরা। ৪৫ লক্ষ কোটি ডলারের সম্পদ লুঠ করে নিয়েছে ব্রিটিশরা। অর্থনীতিবিদ উৎসা পট্টনায়েক এই হিসাব দিয়েছেন। ব্রিটিশদের কাছের লুঠের অর্থও ফেরত চাইছেন ভারতীয় নেটিজেনরা।