নয়া দিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, সোমবার (১১ মার্চ) দেশব্যাপী সিএএ অর্থাৎ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন কার্যকর করল মোদী সরকার। এদিন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইটে সিএএ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর এই আইন পাস হয়েছিল। কোভিড মহামারির জেরে, আইনটি কার্যকর করতে সময় লাগল ৪ বছরের বেশি। এদিন, আইন তো কার্যকর হয়ে গেল, কিন্তু এর ফলে উপকৃত হবেন কত মানুষ? ভারতের নাগরিকদের উপর এই আইনের কোনও প্রভাবই নেই। আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ – ভারতে প্রতিবেশি এই তিন দেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে আগত ছয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতের নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন এনেছে মোদী সরকার। এই শর্ত মেনে কতজন মানুষ সিএএ-র আওতায় ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দুই বছরে নয় রাজ্যের ৩০ জনেরও বেশি জেলাশাসক এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই নয়টি রাজ্য হল, গুজরাট, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, হরিয়ানা, পঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি এবং মহারাষ্ট্র। রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায়, এখনও পর্যন্ত অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের কোনো জেলা কর্তৃপক্ষকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২০২১-২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, এই তিন দেশের ১,৪১৪ জন অমুসলিমকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর গত বছর এই ভাবে ভারতীয় নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন ১৭৩৯ জন।
এ তো গেল ১৯৫৫ সালের পুরোনো আইনের কথা। ২০১৯ সালে এই আইনটিরই সংশোধনী পাস হয়েছিল। এদিন সেই আইন কার্যকর হয়েছে। এবার দেখা যাক, এই আইনে তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে কতজন ভারতের নাগরিকত্ব পেতে পারেন। ভারত সরকারের ১৯৯১ এবং ২০১১ সালের জনগণনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনেই, এই তিন দেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের পরিসংখ্যান রয়েছে। ১৯৯১ সালের জনগণনার রিপোর্টে রয়েছে ১৯৭১ সালের পর থেকে কতজন উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করেছেন, তার হিসেব। আর ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্টে রয়েছে, ১৯৯১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ভারতে কতজন উদ্বাস্তু এসেছেন, সেই তথ্য।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এই তিন প্রতিবেশি দেশ থেকে মোট ১৮.৭৪ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করেছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসেছে প্রায় ১৬.৩ লক্ষ মানুষ। পাকিস্তান থেকে এসেছে ২.২১ লক্ষ মানুষ এবং আফগানিস্তান থেকে প্রায় ১৩,০০০ মানুষ। এদের বেশিরভাগই অবশ্য ১৯৯১ সালের আগেই এসেছিল। যত সময় গিয়েছে, ততই ভারতে আসা উদ্বাস্তুদের সংখ্যা কমেছে। ১৯৭১ সালের পর থেকে যে ১৬ লক্ষ বাংলাদেশি উদ্বাস্তু ভারতে এসেছে, তার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ বা ১২ লক্ষই এসছিল ১৯৯১ সালের আগে। একইভাবে, ১৯৯১ সালের আগেই ভারতে এসেছে প্রায় ১.৪ লক্ষ পাকিস্তানি উদ্বাস্তু (৬৩ শতাংশ) এবং আফগানিস্তান থেকে এসেছিল প্রায় ৭,৭০০ (৬০ শতাংশ) মানুষ।
সিএএ-তে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে, তিন মুসলিম দেশ থেকে কতজন উদ্বস্তু ভারতে এসেছে, তার কোনও পরিসংখ্যান নেই। ভারতে শেষবার জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালেই। এছাড়া, উদ্বাস্তু সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলিতে ধর্মের উল্লেখ নেই। উদ্বাস্তুদের ধর্ম পরিচয় জনগণনার তথ্যে নেই। সিএএ-তে শুধুমাত্র হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং পার্সিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই, এই উদ্বাস্তুদের মধ্যে ঠিক কতজন সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবেন, তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব নয়। তার উপর, এই উদ্বাস্তুদের ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ প্রায় ৩০ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছেন। তবে, ঠিক কতজন পেয়েছেন, তাও স্পষ্ট নয়।