নয়া দিল্লি: আইআইটি জয়েন্ট এন্ট্রান্স টেস্ট, বা মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্স টেস্টের মতো প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলির জন্য সারা দেশেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার। গত কয়েক বছরে, এই সকল কোচিং সেন্টারে পড়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দেশে লাগামহীনভাবে এই সকল কোচিং সেন্টারগুলির গজিয়ে ওঠা এবং তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় নিয়ন্ত্রণ আনতে, নয়া নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্র। এই নির্দেশিকা জারির পর, যখন-তখন যে কোনও জায়গায় প্রাইভেট কোচিং সেন্টার খোলা যাবে না। তার জন্য সরকারি নিবন্ধন লাগবে। এছাড়া, ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদেরও এই কোচিং সেন্টারগুলিতে ভর্তি নেওয়া যাবে না। কোচিং সেন্টারগুলি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যথেচ্ছ ফিও দাবি করতে পারবে না।
কোচিং সেন্টার সংক্রান্ত এই নয়া নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে পাঠানো হয়েছে। কিছু কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যেই কোচিং সেন্টারগুলি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত আইন রয়েছে। কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকা অনুসারে, IIT JEE, MBBS, NEET-এর মতো পেশাদার কোর্সের জন্য কোচিং সেন্টারগুলিতে আগুন এবং ভবনের অন্যান্য সুরক্ষা সম্পর্কে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার চাপ এবং সাফল্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে মানসিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহায়তা দিতে হবে। কঠিন প্রতিযোগিতা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রেক্ষিতে কোচিং সেন্টারগুলিকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতার হাত থেকে রক্ষা করাটা তাদেরই দায়িত্ব। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে হবে।
এছাড়া, কোনও অবস্থাতেই স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের, তাদের স্কুলের সময়ে কোচিং ক্লাস করানো যাবে না। দিনে ৫ ঘণ্টার বেশি ক্লাস নেওয়া চলবে না। খুব সকাল ও গভীর রাতে কোনও ক্লাস নেওয়া যাবে না। উৎসবের সময়, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এক সপ্তাহ ছুটি পাবেন। কোচিং সেন্টারগুলিকে শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পর্যাপ্ত সুযোগ করে দিতে হবে। কোর্স চলাকালীন ফি বাড়ানো যাবে না। সম্পূর্ণ অর্থ প্রদানের পর যদি কোনও শিক্ষার্থী মাঝপথে কোর্স ছেড়ে দিতে চায়, তাহলে কোর্সের অবশিষ্ট সময়ের অর্থ ফেরত দিতে হবে। একই সঙ্গে হোস্টেল এবং মেসের ফিও ফেরত দিতে হবে।
কোনও কোচিং সেন্টার যদি নির্দেশিকা অনুযায়ী নাম নিবন্ধন না করে এবং অন্যান্য শর্তাবলী লঙ্ঘন করে, সেই ক্ষেত্রে কোচিং সেন্টারগুলিকে মোটা টাকা জরিমানা দিতে হবে। প্রথমবার নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য দিতে হবে ২৫,০০০ টাকা। দ্বিতীয়বার একি ভুল হলে ১ লক্ষ টাকা। আর তৃতীয়বার নিয়ম ভাঙলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
সম্প্রতি, রাজস্থানের কোটার কোচিং মার্কেট এবং অন্যান্য বড় কোচিং সেন্টারগুলিতে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই কোটায় ২৬টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এরপর, কিছু অভিভাবক ও এনজিওর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মালা দায়ের করা হয়েছে। এরপরই এই নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় সরকার।