নয়া দিল্লি: খ্রিস্টান এবং ইসলামে ধর্মান্তরিত দলিতদের জন্য তফসিলি জাতির মর্যাদা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। দাবি করা হয়েছিল, তফসিলি জাতি সংক্রান্ত ১৯৫০ সালের সাংবিধানিক আদেশ বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘনকারী ঘোষণা করা হোক। কারণ এটি হিন্দু, শিখ এবং বৌদ্ধ ধর্ম ছাড়া, অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের তফসিলি জাতির মর্যাদা দেয় না। বুধবার (৯ নভেম্বর) এই আবেদনের বিরোধিতা করে পাল্টা হলফনামা দাখিল করল কেন্দ্র।
কেন্দ্র জানিয়েছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে যাতে পিছিয়ে না পড়ে তার জন্যই তফসিলি জাতিদের সংরক্ষণ এবং সনাক্তকরণ করা শুরু হয়েছিল। অস্পৃশ্যতার মতো একটি সামাজিক কলঙ্কের কারণে যাতে তারা পিছিয়ে না থাকে, তার জন্যই ১৯৫০ সালের সাংবিধানিক আদেশ জার করা হয়েছিল। অস্পৃশ্যতার মতো নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা খ্রিস্টান বা ইসলামী সমাজে প্রচলিত ছিল না বলেই এই দুই ধর্মকে এই আদেশের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, ১৯৫০ সালের সাংবিধানিক আদেশ ঐতিহাসিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক তথ্যে এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, খ্রিস্টান বা ইসলামি সমাজে অস্পৃশ্যতার মতো কোন নিপীড়ন ছিল না। তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের খ্রিস্টান বা ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার এটা অন্যতম কারণ। অস্পৃশ্যতার নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েই তারা খ্রিস্টধর্ম বা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। এর পাশাপাশি, কেন্দ্র ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জাতীয় কমিশনের একটি রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান এবং ইসলাম মূলত বিদেশী ধর্ম এবং এর ফলে বর্ণপ্রথা এই দুই ধর্মে স্বীকৃত নয়। এগুলি সাম্যবাদী ধর্ম।
এর আগে বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। সেই রিপোর্টে সমস্ত ধর্মের দলিতদের তফসিলি জাতির মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কেন্দ্র অবশ্য সেই রিপোর্ট গ্রহণ করেনি। এদিন কেন্দ্র বলেছে, ওই রিপোর্ট ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কারণ, প্রতিবেদনটি কোনও ক্ষেত্রের অধ্যয়ন না করেই তৈরি করা হয়েছিল। বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন, তফসিলি জাতি হিসাবে ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্ত জাতিগুলির উপর কী প্রভাব পড়বে তা বিবেচনা করেনি।
হলফনামায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বিষয়টির গুরুত্ব এবং সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে, কেন্দ্র ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে জি বালাকৃষ্ণানের নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন তফশিলি জাতির মর্যাদা প্রদানের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখবে।