দান্তেওয়াড়া: বুধবার ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়া জেলায় নকশালদের আইইডি বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ১০ পুলিশ কর্মী-সহ ১১ জন। যে গাড়িটি বিস্ফোরণের কবলে পড়েছিল, ঠিক তার পিছনেই ছিল একটি স্করপিও গাড়ি। গাড়িটির চালক বলেছেন, তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন এই ঘটনার কথা ভুলতে পারবেন না। বস্তুত, পান মশলা চিবানোর বদ অভ্যাসের জেরেই এই যাত্রা তাঁর এবং তাঁর গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীদের প্রাণ বেঁচে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ঠিক তাঁদের সামনে থাকা গাড়িটিই বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে। রাস্তায় ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় নিহত পুলিশ কর্মীদের দেহাংশ, গাড়িটির ভাঙা অংশ পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। তবে তাঁর বিশ্বাস, মাওবাদীদের মূল লক্ষ্য ছিল তাঁর স্করপিও গাড়িটিই।
ওই চালকের বয়স ২০-র কোঠায়। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশকর্মীদের কনভয়টিতে তাঁর গাড়িটি ছিল দ্বিতীয় স্থানে। তাঁর গাড়িতে মোট সাতজন নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন। বিস্ফোরণস্থল থেকে ১৫০-২০০ মিটার আগে, তিনি গাড়িটির গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ, তাঁর পান মশলা চিবানোর অভ্যাস। সেই সময় পিছনে থাকা একটি মাল্টি-ইউটিলিটি গাড়ি তাঁর স্করপিও গাড়িটিকে চপকে এগিয়ে গিয়েছিল। এর কিছু পরই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ধুলো ও ধোঁয়ার মেঘের মধ্যেই গাড়িতে থাকা প্রত্যেক নিরাপত্তা কর্মী ও তিনি নিজে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। নিরাপত্তা কর্মীরা রাস্তার ধারে গিয়ে নকশালদের উদ্দেশ করে এলোমেলোভাবে গুলি চালাতে শুরু করেছিলেন। সেই সময় চালক প্রাণভয়ে গাড়িটির নীচে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
চালক জানিয়েছেন, প্রায় ১৫ মিনিট ধরে অবিরাম গুলিবর্ষণ চলে। তবে জঙ্গলে নকশালদের কোনও নড়াচড়া তিনি দেখতে পাননি। গোলাগুলি থামলে, নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে আরানপুরে ফিরে যেতে বলেছিলেন। এরপর, সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে থানায় যান তিনি। পথে, পুলিশ কর্মীদের দুটি গাড়িকে তিনি বিস্ফোরণের খবর দিয়েছিলেন। তবে, তার আগেই ওই পুলিশ কর্মীরা বুঝে গিয়েছিলেন যে, কিছু একটা ঘটেছে। কারণ, বিস্ফোরণের শব্দ এত বেশি ছিল যে অনেক দূর থেকেই তা শোনা গিয়েছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর তিনি ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড এবং সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের কর্মীদের পায়ে হেঁটে বিস্ফোরণস্থলের দিকে যেতে দেখেছেন। চালক বলেছেন, “আমার মনে হয়, আমার গাড়িটি ওদের নিশানায় ছিল। কিন্তু, ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করেছেন।”
স্করপিও গাড়ির চালক আরও জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের কবলে পড়ে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ধনীরাম যাদব। তাঁকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। বিস্ফোরণের ঠিক পরের মুহূর্তের একটি মোবাইলে রেকর্ড করা ভিডিয়ো এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিয়োটিতে নিরাপত্তা কর্মীদের রাস্তার পাশে অবস্থান নিতে এবং পুরো এলাকা ঘিরে ফেলার নির্দেশ দিতে দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে গুলির শব্দ। এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘পুরা উড় গয়া’ (পুরো উড়ে গিয়েছে)। মঙ্গলবার রাত থেকেই দান্তেওয়াড়া জেলার দরভা বিভাগে মাওবাদীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে অভিযান শুরু করেছিল সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশের ডিআরজি বাহিনী। বুধবার সকালে, আরানপুর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে নাহাদি গ্রামের কাছে দুই সন্দেহভাজন নকশালকে আটকও করা হয়। এরপর, নিরাপত্তা কর্মীদের ওই কনভয় ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছিল। সেই সময়ই এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে।