সান্তিয়াগো: মাসের প্রথম দিন। এই সময় বেতনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করাটা, প্রত্যেক চাকুরিজীবীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কখনও কল্পনা করে দেখেছেন, মাসের শুরুতে বেতন ঢোকার পর দেখলেন আপনাকে প্রায় ২৮৬ গুণ বেশি বেতন দেওয়া হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে কী করবেন? কল্পনা নয়, সম্প্রতি বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটেছে চিলির এক ব্যক্তির সঙ্গে। নিয়োগকারী সংস্থা তাদের ভুল বুঝতে পেরে, ওই কর্মীকে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে বলেছিল। কিন্তু, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। কারণ ওই ব্যক্তিটি ততদিনে ওই সংস্থা থেকে শুধু ইস্তফাই দেননি, গায়েবও হয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত মাসে। ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টে মে মাসের বেতন ঢোকার পরই তাঁর বেতনের ক্ষেত্রে এই বিরাট অসঙ্গতিটা ধরতে পেরেছিলেন ওই ব্যক্তি। ‘কোনসোরচিও ইন্ডাস্ত্রিয়াল দে আলিমেন্তোস’ বা ‘সিয়াল’ সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। সংস্থাটি চিলির অন্যতম বৃহৎ ‘কোল্ড কাট’, অর্থাৎ স্যালামি, সসেজের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংস প্রস্তুতকারী সংস্থা। চিলির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই কর্মচারীর বেতন মাসে ৫,০০,০০০ পেসো, অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় ৪৩,০০০ টাকা। কিন্তু, জুন মাসের শুরুতে বেতন আসার পর চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল ওই ব্যক্তির। ফার্মটি ভুলবশত তাঁকে ১৬,৫৩,৯৮,৮৫১ পেসো বেতন দিয়েছিল। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১.৪৩ কোটি টাকা!
মজার বিষয় হল, ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে প্রথমেই কিন্তু অসৎ পথে হাঁটেননি ওই ব্যক্তি। বেতন প্রদানে ত্রুটির বিষয়টি তিনি সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের একজন ডেপুটি ম্যানেজারকে জানিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ওই ডেপুটি ম্যানেজারেরও এই বিরাট ভুল দেখে মাথা ঘুরে গিয়েছিল। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিলেন। উপর মহলে জানিয়ে তিনি বেতন সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই-বাছাই করেন। তাতেই ভুলের বিষয়টি নিশ্চিত হয় প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্টের কাছে। জানা যায়, কোনও এক অদ্ভূত ভুলে ওই কর্মচারীকে মে মাসের জন্য প্রায় ২৮৬ গুণ বেশি বেতন দেওয়া হয়েছে।
এরপর ওই কর্মচারীকে ওই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ‘সিয়াল’ সংস্থা। তখনও পর্যন্ত ‘সৎ’ কর্মীটি সংস্থাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর ব্যাঙ্কে গিয়ে ওই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিয়ে দেবেন। কিন্তু, ব্যাঙ্ক থেকে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত আসার নোটিস না পেয়ে সংস্থাটি ওই কর্মীর সঙ্গে ফের যোগাযোগে চেষ্টা করে। কিন্তু, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোনে মেসেজ পাঠালেও কোনও সাড়া দেননি বলে অভিযোগ।
‘সিয়াল’ সংস্থার দাবি, এরপর আবার তিনি নিজেই ম্যানেজমেন্টকে জানান, তিনি অতিরিক্ত সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। শীঘ্রই ব্যাঙ্কে যাবেন এবং টাকাটা ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু, ২ জুন তিনি সংস্থাকে পদত্যাগপত্র দিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন বল অভিযোগ। তাঁর সঙ্গে আর কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তিনি কোথায় আছেন, তাও জানা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় অতিরিক্ত অর্থ উদ্ধারে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাঁর বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের মামলা করা হচ্ছে।