নয়া দিল্লি: ঘরের আগুনেই দগ্ধ হচ্ছে কংগ্রেস (Congress)। স্থায়ী সভাপতি না থাকা নিয়ে ফের একবার অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে (Sonia Gandhi) চিঠি দিলেন কংগ্রেসে বিক্ষুব্ধ নেতারা (G-23)। জি-২৩ নামে পরিচিত এই নেতাদের পক্ষ থেকে সোনিয়াকে এই চিঠি দেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। সেই চিঠি প্রসঙ্গেই কথা বলতে গিয়ে বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একের পর এক সওয়াল দাগেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বল (Kapil Sibal)।
“কংগ্রেসে এখন কোনও নির্বাচিত সভাপতি নেই। তাহলে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে কে? কেউ জানতে পারছি না কারা দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা জি-২৩, জি হুজুর-২৩ নয়। আমরা সমস্যাগুলি তুলতে থাকব,” কার্যত দলের বিরুদ্ধেই একের পর এক তোপ দেগে বলেন সিব্বল।
বুধবারই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরিও। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের আরও বহু নেতা। পঞ্জাবের ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংও দল বদলের জল্পনা উস্কে দিয়ে এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছেন। কংগ্রেসের এহেন স্পর্শকাতর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সিব্বলের প্রশ্ন, “কেন একে একে নেতারা দল ছেড়ে যাচ্ছেন? সমস্যাটা কী আমাদের? সেটা হয়তো দেখার সময় এসেছে। অবিলম্বে ওয়ার্কিং কমিটির একটা বৈঠক ডাকা উচিত। যাতে আলোচনা অন্তত করা যায়।”
বিক্ষুব্ধ নেতাদের পক্ষ থেকে সিব্বলই অবশ্য দল না ছাড়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তাঁর কথায়, “আমরা এই মতাদর্শ বা দল ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।” তবে হাইকমান্ডকে খোঁচা দিতেও তিনি ছাড়েননি। ব্যঙ্গাত্মক সুরে সিব্বলকে বলতে শোনা যায়, “কংগ্রেসে অদ্ভূত বিষয় এটাই যে- তাঁরা (গান্ধী পরিবার) যে ঘনিষ্ঠদের বেছে নিয়েছিলেন, সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এবং যাঁদের ওঁরা কাছের মানুষ বলে মনে করেন না, তাঁরাই রয়ে গিয়েছেন।”
বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র চার মাস বাকি থাকতে পঞ্জাবে কংগ্রেসের সরকারের ভারসাম্য নড়ে গিয়েছে। গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নভজ্যোৎ সিং সিধুকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করার পরই ক্ষোভের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন অমরিন্দর। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হন চরণজিৎ সিং চন্নি। যিনি সিধু ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু এই ঘটনার সপ্তাহখানেকের মধ্যে গতকালই পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের পদ থেকে ইস্তফা দেন সিধু। তাঁর দেখাদেখি দুই মন্ত্রীও ইস্তফা দিয়ে দেন। সব মিলিয়ে পঞ্জাবে টালমাটাল পরিস্থিতির সম্মুখীন শতাব্দী প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি।
এই অবস্থায় গত বছর জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দিয়ে দল ভাঙার খেলা শুরু হয়েছিল, তা জিতিন প্রসাদ, সুস্মিতা দেব, ও আজ লুইজিনহো ফেলেইরিওর হাত ধরে অব্যাহত রয়েছে। রাজস্থানেও অশোক গেহলট বনাম সচিন পাইলটের দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। কংগ্রেসের এমন শোচনীয় পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো ব্যথিত সিব্বলের মতো বর্ষীয়ান নেতারা। আফসোসের সুরে তিনি এ দিন বলেন, “আপনাদের সামনে এভাবে আসতে হচ্ছে, তার জন্য আমার মন অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু আমাদের (জি-২৩) কাছে আর কোনও উপায় নেই। কংগ্রেসকে আমি এই অবস্থায় দেখতে পারছি না।”
আরও পড়ুন: Amarinder Singh Meets Amit Shah: এবার বিজেপিতে ক্যাপ্টেন? জল্পনা বাড়িয়ে শাহি সাক্ষাতে অমরিন্দর