Keerthika: ‘দোকানে যাওয়ায় চড় খেয়েছিলাম’, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কৃত কীর্তিকার গল্প চোখে জল আনবে
keerthihistory: কীর্তিকা তাঁর ইন্সটাগ্রাম পোস্টে লেখেন, "এমন ঘটনা যা আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার তখন ১৫ বছর বয়স। এক রাতে আমি শুনি, বাবাকে কাঁদছে কারণ গ্রামের লোকজনেরা আমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছিল। সারা জীবন, ওরা (পরিবারের সদস্যরা আমার জন্য লজ্জিত ছিল।"
নয়া দিল্লি: সোশ্যাল মিডিয়াও এখন কর্মক্ষেত্র। ভিডিয়ো কনটেন্ট তৈরিও পেশা, যার পোশাকি নাম কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এই পেশা ও তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্মান জানাতেই দেশে প্রথমবার ন্যাশনাল ক্রিয়েটর অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত হল। গত ৮ মার্চ নয়া দিল্লির ভারত মন্ডপমে প্রধানমন্ত্রী নানা ক্ষেত্রে যুক্ত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের পুরস্কৃত করেন। এদের মধ্যেই একজন হল কীর্তিকা গোবিন্দস্বামী। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কীর্তি হিস্ট্রি নামেই পরিচিত। ভারতের নানা অজানা কাহিনি, ইতিহাস ভিডিয়োর মাধ্যমে তুলে ধরেন কীর্তিকা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাত থেকে পুরস্কৃত হওয়ার পর নিজের ইন্সটাগ্রাম পোস্টে জীবন সংগ্রাম তুলে ধরেন কীর্তিকা, যা জানলে চোখে জল চলে আসবে।
কীর্তিকা তাঁর ইন্সটাগ্রাম পোস্টে লেখেন, “এমন ঘটনা যা আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার তখন ১৫ বছর বয়স। এক রাতে আমি শুনি, বাবাকে কাঁদছে কারণ গ্রামের লোকজনেরা আমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছিল। সারা জীবন, ওরা (পরিবারের সদস্যরা আমার জন্য লজ্জিত ছিল। নাহ, আমার কোনও বয়ফ্রেন্ড ছিল না। লেখাপড়াতেও খুব ভাল ছিলাম। তাহলে কী ভুল ছিল আমার? আমি শুধু আমার মতো করে থাকতে চেয়েছিলাম। পরিবারের কোনও পুরুষের উপরে নির্ভর করতে চাইনি।”
View this post on Instagram
কীর্তিকা আরও লেখেন, “আপনারা জানেন, আমাদের পরিবারের মেয়েদের কখনও দোকানে যেতে দেওয়া হয়নি। সামান্য কিছু প্রয়োজন হলেও, ভাইদের হাতে-পায়ে ধরতে হত। একবার আমি বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে দোকানে গিয়েছিলাম বলে চড় মারা হয়েছিল। মৌলিক অধিকার নিয়েও আমায় লড়াই করতে হয়েছে। আমার স্বপ্ন ছিল প্রত্নতত্ত্ববিদ হওয়ার। সেই জন্য আমি স্নাতকের বিষয় হিসেবে ইতিহাস বেছে নিই। কিন্তু স্নাতক শেষ করার পর, আমার পরিবারের সদস্যরা বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। আমার এখনও মনে আছে আমি সেদিন অসহায়ভাবে কেঁদেছিলাম।”
কীর্তি আরও লিখেছেন, ‘এরপর আমার কাছে যা কাজই আসত, আমি তাই করতাম। টিউশনি থেকে শুরু করে রিসেপশনিস্ট- কী না কাজ করেছি। এমনকী, ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবেও কাজ করেছি। একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনতে আমার প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছিল। বাবা আমার সঙ্গে টানা ৬ বছর ধরে কথা বলেনি। আমার বাবা-মাকে ভুল বুঝবেন না। তাঁরা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু গ্রামে শুধু আপনার বাবা-মা আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় না। আত্মীয়-স্বজনরাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁরা সবকিছুর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। আমার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।”
এরপরে সোজা ২০২৪ সালের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করেন কীর্তিকা। বলেন, “আমি প্রথমবার বিমানে চড়লাম এবং আমার পরিবারের সদস্যরা আমায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে পুরস্কার নিতে দেখল। এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। আমি যখন তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী) দেখলাম, তখন ওঁরা খুশির সর্বোচ্চ সীমায় ছিল। উনি যখন আমার দিকে তাকালেন, আমার মনে হল, আমি জীবনে জিতে গিয়েছি। আশা করি, আগামী প্রজন্মের মেয়েদের জন্য উন্নতির পথে কম কাঁটা থাকবে। আশা করি, তারা বুঝতে পারবে যে আপনার মেয়েকে শিক্ষিত করার অর্থ এই নয় যে সে কারোর সঙ্গে পালিয়ে যাবে। ওদের বাঁচতে দাও, পড়াশোনা করতে দাও।”