বালেশ্বর: অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবারও রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ, বাহানাগা গ্রামে তাঁর দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরবেন বলে ভাবছিলেন অশোক সামাল। দোকানের সামান্য দূরেই রয়েছে রেলের লাইন। হঠাৎ, একটা কানফাটা শব্দ শুনেছিলেন তিনি। অশোক এবং এলাকার অন্যান্য দোকানদার রেল লাইনের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখেছিলেন, তালগোল পাকিয়ে পড়ে আছে রেলের কামরার স্তূপ। বালেশ্বরে করমন্ডল এবং যশবন্তপুর এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায়, ঘটনাস্থলে ছুটে আসা প্রথম কয়েকজন গ্রামবাসীর অন্যতম অশোক। এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, “সবাই চিৎকার করছিল আর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল চারিদিক। উলটে যাওয়া বগিগুলিতে আটকে পড়া বেশ কয়েকজন সাহায্য চাইছিল। আমি, উল্টে যাওয়া বগির নিচে বেশ কিছু মৃতদেহ আটকে থাকতেও দেখেছি।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওডিশার বালাসোর জেলার বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে তিনটি ট্রেনের একসঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছে এই দুর্ঘটনায়। যার মধ্যে বাংলার বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। তাদের অনেকে ভাগ্যক্রমে রক্ষাও পেয়েছেন। গোবিন্দ মন্ডল তাঁদেরই একজন। করমন্ডল এক্সপ্রেসের প্রথম বগিতে ছিলেন তিনি। তিনি বলেছেন, “আচমকা দুর্ঘটনায় আমাদের কামরাটা খুব দ্রুত গতিতে লাইনচ্যুত হয়েছিল। বেশ কিছু গিয়ে সেটা থেমেছিল। হট্টগোলের মধ্যে হঠাৎ দেখেছিলাম, আমার আসনের পাশের জানালাটা লোহার গ্রিল সহ ভেঙে গিয়েছে। উদ্ধারকারীদের একজন সেটা ধাক্কা মেরে খুলে ফেলেছিল। তাতেই আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম।” তিনি আরও জানিয়েছেন, বহু যাত্রী কামরাগুলির ভিতরে আটকা পড়েছেন। তাঁরা অসহায়ভাবে কামরার ভিতর থেকে সাহায্য চাইছিলেন। তাদের মধ্যে একজন জানিয়েছিলেন, তাঁর বুকে ব্যথা করছে।
শুভঙ্কর রুইদাস আবার ছিলেন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের ট্রেনটি যখন লাইনচ্যুত হয়ে করমন্ডল এক্সপ্রেসে ধাক্কা মেরেছিল, তখন মনে হয়েছিল যেন কোনও শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। তহবে তাঁর কামরার তেমন ক্ষতি হয়নি। তাঁরা সকলে ট্রেনের ভিতরেই ছিলেন। পরে উদ্ধারকারীরা এসে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান। শুভঙ্কর আরও জানিয়েছেন, করমন্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। উদ্ধারকারীদের সেই ট্রেন থেকে আহত যাত্রীদের সাহায্য করতেও দেখেছেন তিনি।