প্রতিনিয়ত করোনা সংক্রমণ রেকর্ড পার করায় চিন্তায় পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিগত এক মাসেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। জানুয়ারি মাস থেকে দেশে টিকাকরণ শুরু হলেও ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে করোনা সংক্রমণ। দেশের মোট সংক্রমণের ৭৫ শতাংশই পাঁচটি রাজ্যে হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সংক্রমণ বাড়ছে বঙ্গেও এই পরিস্থিতিতে একাধিক রাজ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নানা নিয়মবিধি জারি করা হয়েছে। একনজরে দেখে নিন দেশের করোনা পরিস্থিতি-
পশ্চিমবঙ্গেও ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। শুক্রবার ফের একবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ পেরিয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ দিন নতুন করে ৩৪৭ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩,২৯৭। গত ২৪ ঘণ্টায় হাওড়ার আরও একজনের প্রাণ কেড়েছে এই ভাইরাস। ফলে প্রায় গত এক বছরে রাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৩০১। রাজ্যে সংক্রমণের পরিস্থিতি এখনই উদ্বেগজনক না হলেও সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে মাস্ক পরা এবং হাতে নিয়মিত স্যানিটাইজার দেওয়ার কথা বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমজনতাকে।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতেই সিকিমে নাইট কার্ফু জারি করা হল। বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং (Prem Singh Tamang) জানান, বাড়তি সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামিকাল থেকে রাজ্যজুড়ে নাইট কার্ফু জারি করা হচ্ছে। রেস্তরাঁ, বার, নাইট ক্লাব, জিম সব যাবতীয় প্রতিষ্ঠান রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর ৬টা অবধি নাইট কার্ফু জারি থাকবে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য সমস্ত যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এবারে ভোটারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী কী?
দেশের পাশাপাশি রাজ্যেও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৩ জন, সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। নির্বাচনের মুখে করোনা পরিস্থিতি যাতে ভয়াবহ আকার ধারণ না করে সেই কারণে টিকাকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪৭ জনকে করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৮৬ হাজার ৪১৮ জন প্রথম ডোজ় নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন ১৪ হাজার ৪ জন। এদের মধ্যে মুর্শিদাবাদে একজন মহিলা টিকা নেওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই তাঁকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র সহ একাধিক রাজ্যে করোনা সংক্রমণে রাশ টানতে জনসমাগমে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। একদিকে পঞ্জাবে যেমন বলা হয়েছে যে সিনেমা হলগুলি ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে পরিচালন করতে হবে। শপিং মলগুলিতেও একই সময়ে ১০০ জনের বেশি লোকসংখ্যা যাতে না হয়, সেই বিষয়েও নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্জাবের যে ১১টি জেলায় সর্বাধিক আক্রান্তের খোঁজ মিলছে, সেখানে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিয়েবাড়ি বা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২০ জনের বেশি উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলেও জানিয়েছে পঞ্জাব প্রশাসন। একইভাবে মহারাষ্ট্রেও বেসরকারি অফিস, সিনেমা হল সহ একাধিক কর্মস্থলে ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতেই কড়া নিয়মবিধি জারি করলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। শুক্রবার রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, “রাজ্যে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমমের বিষয়টি মাথায় রেখেই রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ৩১ মার্চ অবধি বন্ধ রাখা হবে। কেবল মেডিক্যাল ও নার্সিং কলেজগুলি খোলা থাকবে।”
মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতেই কঠোর হয়েছে সরকার। মাস্ক না পরলে মোটা জরিমানা, শপিং মল, হোটেল-রেস্তরাঁয় সামাজিক দূরত্ব না মানলে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে ঠাকরে সরকার। গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় সমস্ত শপিং মলে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা (Rapid antigen Test) বাধ্যতামূলক করেছে বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (BMC)। আগামী ২২ মার্চ থেকে এই নিয়ম চালু করা হবে।