দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে করোনার নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। মঙ্গলবার পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে দেশে নতুন করে ২ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ হাজার ৮৯১তে। দেশের ২৯ রাজ্যে থাবা বসিয়েছে ওমিক্রন। করোনা সংক্রমণ রুখতে বিধিনিষেধ জারি করা হলেও দেশের একাধিক প্রান্তে ধরা পড়ছে নিয়ম ভাঙার চিত্র। করোনা ও ওমিক্রন সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট দেখে নিন একনজরে-
কোন কোন ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই, এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা কিছুদিন আগেই দিয়েছে কেন্দ্র। আর এবার কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হল যাতে করোনা পরীক্ষার হার বাড়ানো হয় দ্রুত। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দেশ জুড়ে পরীক্ষার হার অনেকটাই কমে গিয়েছে। দ্রুত সেটা বাড়াতে হবে। একাধিক রাজ্যে পরীক্ষা কমেছে বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই বার্তা দিয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন : Covid Testing in India: ‘অবিলম্বে টেস্ট বাড়ান’, রাজ্যগুলিকে চিঠি কেন্দ্রের
১০ জানুয়ারি থেকে দেশে প্রিকশন ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ এই প্রিকশনারি ডোজ বা বুস্টার ডোজ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী। টিকা প্রাপকদের মধ্যে আছেন স্বাস্থ্য কর্মী, কোভিড যোদ্ধা এবং ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি যাদের কোমর্বিডিটি আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৮০ লক্ষ করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। আর দেশে মোট টিকাকরণের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫৮.০৪ কোটি। ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই কোভিড যোদ্ধা, স্বাস্থ্য কর্মী ও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের টিকার প্রিকশনারি ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। এইবার সেই টিকাকরণে সাফল্যের পথে ভারত।
বিস্তারিত পড়ুন : Covid-19 Pandemic : বর্ষপূর্তিতে আরও এক সাফল্য,৭ দিনে দেওয়া হল ৫০ লক্ষের বেশি বুস্টার ডোজ
করোনার কোনও ওষুধ এখনও আসেনি দেশের বাজারে। মোলনুপিরাভির (Molnupiravir) ব্যবহার নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চললেও এখনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি দেশে। করোনা অতিমারির শুরু থেকেই বিভিন্ন ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় চিকিৎসকরা যে সব ওষুধ ব্যবহারের কথা বলেছিলেন, এ বার সেগুলিও বাদ পড়েছে। এইমসের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে কোভিড চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়া গাইডলাইন প্রকাশ করেছে আইসিএমআর। আর সেই গাইডলাইনে স্টেরয়েড যথাসম্ভব ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন : Covid Treatment: বাদ আইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিন, প্রকাশ হল কোভিড চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়া গাইডলাইন
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নয়া পদক্ষেপ অসম সরকারের। ভ্যাকসিন ছাড়া পাবলিক প্লেসে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে ভ্যাকসিন না নিলে বাড়ি থেকে বেরনো যাবে না।
ওমিক্রন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ় দেওয়া শুরু হল ইজরায়েলে। এটিকে সেকেন্ড বুস্টার বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
ওমিক্রন আতঙ্ক ক্রমেই বেড়ে চলেছেন। কেরলে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হলেন ৬৩ জন। সবমিলিয়ে রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্য়া ৫৯১ তে দাঁড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৪০১ জন কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে এসেছেন। ১০১ জন এসেছেন অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে। ৭০ জনের কোনও ভ্রমণের ইতিহাস হিসেবে না থাকলেও আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসার কারণে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা।
করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ থাকলে বা রোগী উপসর্গহীন থাকলে ১০ দিনে নিভৃতবাসের পর রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে, চিকিৎসকদের তরফে এই দাবি করা হয়ছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর একজন সংক্রমণের ১০ দিন পরও রোগ ছড়াতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেক্সিয়াস ডিজিজ নামক এক স্বাস্থ্য জার্নালে এই সংক্রান্ত গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
মৃত করোনা রোগীদের নিয়ে নতুন পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে মহারাষ্ট্রের সরকারি হাসপাতালে মৃত করোনা রোগীদের ৬৮ শতাংশেরই কোভিড টিকাকরণ হয়নি, এমনটাই জানিয়েছে মহারাষ্ট্র মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড ড্রাগ ডিপার্টমেন্ট। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মৃত ৩২ শতাংশ রোগীর করোনা টিকার একটি বা দুটি ডোজ় সম্পন্ন হয়েছিল এবং তাদের অনেকেরই আগে থেকে রোগের ইতিহাস ছিল।
করোনা আক্রান্ত অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা চন্দ্রবাবু নাইডু। টুইটে নিজের সংক্রমণের কথা জানিয়েছেন, চন্দ্রবাবু নিজেই। মঙ্গলবার তেলেগু দিশম পার্টির নেতা বিবৃতি জারি করে বলেন, “মৃদু সংক্রমণ নিয়ে আমি করোনা আক্রান্ত। আমি বাড়িতেই নিভৃতবাসে রয়েছি এবং সব ধরনের সতর্কতা নিয়েছি। আমার অনুরোধ, যাঁরা আমার সংস্পর্শে এসেছেন তাঁরা দ্রুত করোনা পরীক্ষা করান। সবাই সুস্থ থাকুন, সাবধানে থাকুন।”
I've tested positive for COVID with mild symptoms. I have quarantined myself at home and taking all the necessary precautions.
I would request those who came in contact with me to get themselves tested at the earliest. Please be safe and take care.
— N Chandrababu Naidu (@ncbn) January 18, 2022
সারা বিশ্বে ওমিক্রন ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়া কোভিড পরিস্থিতির এক ভয়াবহ দিনের সাক্ষী রইল। সেদেশ ওমিক্রম আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রতিদিনের তুলনায় সংক্রমণ কিছুটা কম হলেও ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ওমিক্রনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার করোনা পরিস্থিতি ক্রমশই মারাত্মক আকার ধারণ করছে। করোনা অতিমারির শুরুর সময় থেকে শুরু করে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি ইনটেনসিভ কেয়ারেও রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
করোনা ভাইরাস আগমনের দু’বছর ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। সারা বিশ্ব এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিভিন্ন দেশেই নাগরিকদের করোনা টিকা দুটি ডোজ় দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এখন সংক্রমণ রুখতে তৃতীয় ডোজ় দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অনেক দেশ। এরমাঝেই করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আগমন উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওমিক্রন করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট গুলির তুলনায় অনেক বেশি সংক্রমক। এবার ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে গবেষণায় নতুন দাবি সামনে এল। সোমবার, ইজরায়েলের এক হাসপাতালের তরফে প্রাথমিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে ভ্যাকসিনে চতুর্থ ডোজ় সাময়িকভাবে রোধ করতে পারে ওমিক্রন সংক্রমণ।