রায়পুর: ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়ায় পুলিশের গাড়িতে মাওবাদী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সম্ভবত মাওবাদী কমান্ডার তথা দরবা বিভাগীয় কমিটির প্রধান জগদীশ। গত বুধবার, দান্তেওয়াড়ার অরহানপুর থানা এলাকায় পুলিশকর্মী ভর্তি একটি মাল্টি-ইউটিলিটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ওই হামলায় ১০ পুলিশ কর্মী এবং এক অসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, জগদীশকে ধরার জন্যই ওই এলাকায় পুলিশি অভিযান শুরু করা হয়েছিল। আরহানপুর এলাকায় জগদীশের উপস্থিতি সম্পর্কে গোপন খবর ছিল পুলিশের কাছে। তার ভিত্তিতেই ওই এলাকায় অভিযানে গিয়েছিল পুলিশ। বিস্ফোরণের ঘটনার পর, পুলিশের সন্দেহ মাওবাদীরা ইচ্ছা করে পুলিশের তথ্যদাতাদের সঙ্গে ভুল তথ্য ভাগ করে নিয়েছিল। আসলে একেবারে বিস্ফোরণস্থলেই ছিল জগদীশ, প্রাথমিক তদন্তের পর এমনই সন্দেহ পুলিশের।
ছত্তীসগঢ়ের পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, মোবাইল ফোনের টাওয়ার অবস্থান বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে যে মাওবাদীরা ফোনে জগদীশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। এক পুলিশ কর্তা বলেছেন, “সন্দেহ হচ্ছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাওবাদী কমান্ডারদের একজন ছিলেন জগদীশ। আমরা এই বিষয়ে তদন্ত করছি।” পুলিশের মতে, সম্ভবত ওই স্থান থেকে পালানোর জন্যই ওই বিস্ফোরণ এবং গুলি চালানোর বিষয়ে ক্যাডারদের রিয়েল-টাইমে নির্দেশ দিয়েছিল জগদীশ। ২০১৩ সালে দরবা এলাকাতেই কংগ্রেসের পুরো রাজ্য নেতৃত্বকে নির্মূল করেছিল মাওবাদীরা। যা দরবা গণহত্যা নামে পরিচিত। ২০১৯ সালে বিজেপি বিধায়ক ভীমা মান্ডবীকে হত্যার পিছনেও মাওবাদীদের দরবা বিভাগীয় কমিটিরই হাত ছিল বলে মনে করা হয়।
তবে সম্প্রতি পুলিশি অভিযানের জেরে দরবা বিভাগীয় কমিটির প্রভাব ক্রমশ কমছিল। গোয়েন্দাদের মতে, দরবা বিভাগীয় কমিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জগদীশকে। দান্তেওয়াড়া হত্যাকাণ্ড, বস্তার জেলায় দরবা বিভাগীয় কমিটির উপস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। এই ঘটনার পর, জগদীশ এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, ইউএপিএ এবং হত্যা এবং হত্যার চেষ্টা সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, অন্তত এক মাস আগেই রাস্তার নীচে বিস্ফোরণে ব্যবহৃত ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসটি পোঁতা হয়েছিল। বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট আগে সেটিকে তারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
এদিকে, এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের মিনিট কয়েক আগেই দান্তেওয়াড়া ডিআরজি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছিল দুই মাওবাদী সদস্য। তারাই এখন এই ঘটনার তদন্তের প্রধান চাবিকাঠি। গ্রেফতার হওয়া দুই মাও সদস্যের মধ্যে কোসা ওরফে সান্না নামে এক ব্যক্তির উরুতে গুলি লেগেছিল। তাকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরজন আপাতত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাআছে। তাকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে পুলিশ। অন্যদিকে আহত মাও সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আপাতত ডাক্তারদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাঁরা কোসা ওরফে সান্নাকে মেডিক্যালি ফিট ঘোষণা করলেই তাকে জেরা করা শুরু হবে। পুলিশের অনুমান এই দুই মাওবাদীর সদস্যের কাছে, দান্তেওয়াড়া হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য ছিল। এক তেলেগু-ভাষী মহিলা এই হামলার সময় সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ‘হেমলতা’ নামে পরিচিত ওই মহিলার আসল পরিচয় জানার জন্য তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশের আরও সন্দেহ, সম্ভবত এই হামলায় শিশুদেরও ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী এবং ডিআরজি সদস্যরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণস্থলের কিছু আগে ‘আম পান্ডুম’-এর জন্য বিভিন্ন গাড়ি থামাচ্ছিল কয়েকজন শিশু। আম পান্ডুম হল আদিবাসীদের এক উৎসব। আদিবাসী দেবতাকে প্রথম ফলা আম দেওয়ার উৎসব। এই উৎসবের জন্য গাড়ি থামিয়ে অনুদান সংগ্রহ করছিল শিশুরা। পুলিশের সন্দেহ, ওই সময়ই কোন কোন গাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আছে, তা চিহ্নিত করা হয়েছিল। কারণ, বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট আগেই ওই রাস্তা দিয়ে তিনটি যাত্রীবাহী গাড়িও গিয়েছিল। সেগুলিকে নিশানা করা হয়নি। বেছে বেছে পুলিশকর্মীদের গাড়িতেই হামলা চালানো হয়েছিল।