Delhi Blast: আদিল শ্রীনগরের, শাহিন লখনউয়ের! তাও কীভাবে তৈরি হল ‘চিকিৎসক-জঙ্গিদের’ নেটওয়ার্ক?
Delhi Blast News: এই 'ডেড ড্রপ ইমেইল' পদ্ধতির জন্য সন্দেহভাজনরা একটিই ইমেইল আইডি ব্যবহার করত। যার পাসওয়ার্ড জানা ছিল নেটওয়ার্কের প্রতিটি সদস্যদের। একজন সাধারণ মানুষ কারওর সঙ্গে মেইল মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট মেইল আইডিতে তাঁর বার্তা পাঠান। সন্দেহভাজনরা তা করতেন না। মেল টাইপ করে 'সেন্ড' না করে 'সেভ ড্রাফট' করে রাখতেন তাঁরা।

নয়াদিল্লি: তদন্তকারীদের নজরে দেশের চিকিৎসকরা? দিল্লি বিস্ফোরণ-কাণ্ডে NIA-র হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে আটক করা হচ্ছে সন্দেহভাজন চিকিৎসকদের। সঙ্গে প্রকাশ্যে আসছে জঙ্গিদের বিস্তারিত নেটওয়ার্ক। কিন্তু এই নেটওয়ার্কের সদস্যরা কীভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন? অবশেষে সেই তথ্যটাও পেয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দারা বলছেন, জঙ্গিদের ভাষায় এই পদ্ধতির নাম ‘ডেড ড্রপ’।
কী এই ডেড ড্রপ ই-মেইল?
প্রযুক্তির নাম ‘Dead Drop Email’। লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে NIA-র গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সন্দেহভাজন জঙ্গি ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন প্রথাগত ই-মেলকে ব্যবহার করে। সাধারণ ভাবে একটি জঙ্গি নেটওয়ার্কের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য় ‘থ্রিমা’ বা ‘টেলিগ্রামের’ মতো অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু দিল্লির বিস্ফোরণের সন্দেহভাজনরা ব্যবহার করতেন ই-মেইল। অবশ্য সাধারণ ই-মেইল ব্যবহার করলেও, তাঁদের পদ্ধতি ছিল একেবারে অন্য়, অভিনব। যা ধুলো দিতে পারে তদন্তকারীদের চোখেও। সেটিই হল ‘ডেড ড্রপ ইমেইল’ পদ্ধতি।
এই ‘ডেড ড্রপ ইমেইল’ পদ্ধতির জন্য সন্দেহভাজনরা একটিই ইমেইল আইডি ব্যবহার করত। যার পাসওয়ার্ড জানা ছিল নেটওয়ার্কের প্রতিটি সদস্যদের। একজন সাধারণ মানুষ কারওর সঙ্গে মেইল মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট মেইল আইডিতে তাঁর বার্তা পাঠান। সন্দেহভাজনরা তা করতেন না। মেল টাইপ করে ‘সেন্ড’ না করে ‘সেভ ড্রাফট’ করে রাখতেন তাঁরা। এই মেলেই সম্ভাব্য হামলার তারিখ, জায়গার নাম লেখা থাকত। ড্রাফট খুলে হামলার ই-মেল পড়তেন, এডিট করতেন, পরে মুছে দিতেন। এক কথায় নেই কোনও ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’। ৯/১১ হামলাতেও আল কায়দা জঙ্গিরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল। যা এবার সম্ভবত অনুসরণ করা হয়েছে দিল্লি বিস্ফোরণ-কাণ্ডেও।
এই ‘ডেড ড্রপ’ ইমেল ব্যবহার করেই লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের ছক কষে উমর, মুজাম্মিল ও শাহীন-রা, এমনটাই অভিযোগ। ৯/১১-র হামলাকারী মহম্মদ আটা ও রামজি বিনালশিভ নিজেদের হটমেল অ্যাকাউন্ট-এ হামলার ব্লু-প্রিন্ট ‘ড্রাফট’ ফোল্ডারে সেভ করে রাখত। সেখানে কোড ওয়ার্ডে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার-কে ‘আর্কিটেকচার’ , পেন্টাগন-কে ‘আর্ট’ বলে উল্লেখ করা হত। ২০০৪ সালে মাদ্রিদ বম্বিংয়েও মুলচক্রীরা-ও ইয়াহু ও হটমেল-এ এই ‘ডেড ড্রপ’ পদ্ধতিতে ড্রাফট-এ হামলার নকশা সেভ করে রেখেছিল।
কোথা থেকে এল এই পদ্ধতি?
ঠাণ্ডা যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ারের সময় সোভিয়েত ও মার্কিন চরদের মধ্যে এই পদ্ধতি বহুল প্রচলিত ছিল। তবে সে সময় তো ইমেল ছিল না। চরেরা কোনও পাবলিক প্লেসে দেখা করত। মুখোমুখি না বসে উল্টোদিকে মুখ করে বসত। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলত না। একজন একটি কাগজে দরকারি কথাটুকু লিখে সেটি রেখে দিয়ে উঠে চলে যেত। অন্য ব্যক্তিটি কোনও কথা বলে, স্রেফ সেই বার্তাটি তুলে নিয়ে চলে যেত। দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হওয়ার কোনও প্রমাণ থাকত না। কেউ দু’জনকে ফলো করলেও কোনও ছবি তুলে প্রমাণ রাখতে পারত না। সেই কোল্ড ওয়ারের জমানা থেকেই ডেড ড্রপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি মুম্বই হামলারও গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য আদানপ্রদানে ডেভিড হেডলি তার হ্যান্ডলারদের জন্য এই ডেড ড্রপ মেথড-ই ব্যবহার করত।
