নয়া দিল্লি: বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ মাত্রায় উঠেছিল যমুনা নদীর জলস্তর। যার জেরে দিল্লি শহরে দেখা দিয়েছে বন্যা। রবিবার পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, অফিস, শ্মশান বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি সরকার। বন্ধ করে দিতে হয়েছে তিনটি জল শোধনাগার। তবে আশার কথা, ধীরে ধীরে জল নামছে যমুনার। এখনও অবশ্য অধিকাংশ নীচু এলাকাতেই ঘরবাড়ি, বাজার, রাস্তাঘাট, পর্যটনস্থল জলের তলায়। দিল্লির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্তব্ধ। দিল্লি সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের একটি রেগুলেটর খারাপ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এর ফলেই যমুনার জল শহরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে, দিল্লির বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে, ফ্রান্স থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে খোঁজখবর নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, শাহ মোদীকে বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেন। সেই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যমুনার জলস্তর নেমে যাবে।
একটি টুইট বার্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, “যমুনা নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে দিল্লির কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শাহ তাঁকে জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জলস্তর কমার সম্ভাবনা রয়েছে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। উদ্ধার ও ত্রাণের কাজ পরিচালনা করতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স বা এনডিআরএফ-এর পর্যাপ্ত সংখ্যক দল মোতায়েন করা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, বাস্তিল দিবস উদযাপনে সাম্মানিক অতিথি হিসেবে যোগ দিতে, বর্তমানে দুই দিনের সফরে ফ্রান্সে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, দিল্লি সরকার জানিয়েছে, শহরে বন্যার জলের প্রবাহ বন্ধ করতে সেচ দফতরের ক্ষতিগ্রস্ত রেগুলেটরটি সারানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দফতরের আধিকারিকরা এবং বিপুল সংখ্যক কর্মী এই কাজে নিযুক্ত। মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ এই কাজের তদারকি করছেন। সব মিলিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বারোটি দলকে ত্রাণ এবং উদ্ধারের কাজে মোতায়েন করা হয়েছে। নৌকা, দড়ি এবং অন্যান্য সাজ সরঞ্জাম রয়েছে তাদের কাছে। এখনও পর্যন্ত ২০,০০০-এরও বেশি মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল।
লাল কেল্লার কাছে ধমনী আউটার রিং রোড, বিশ্বকর্মা কলোনি, যমুনা বাজার, আইএসবিটি বাস টার্মিনাস, কাশ্মীরি গেট, শঙ্করাচার্য রোড, মজনু কা টিলা, বাটলা হাউস, কিরারি এবং কিংসওয়ে ক্যাম্প এখনও জলের নীচে। যমুনার জল পৌঁছে গিয়েছে ঐতিহাসিক লাল কেল্লার দেওয়ালেও। আপাতত লাল কেল্লার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির বন্যার প্রভাব পড়েছে গোটা উত্তর রেলওয়ের ট্রেন চলাতলে। এই শাখায়, সামনে ৬ দিনে প্রায় ৬০০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। দিল্লি-শহদ্র লাইনে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল।
গত কয়েকদিন দিল্লিতে বৃষ্টি না হলেও, হরিয়ানার হাতনিকুণ্ড বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজধানীতে। এদিকে, শুক্রবার দিল্লিতে হালকা বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ। শনিবার অবশ্য বৃষ্টির জন্য দিল্লি শহরে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ফলে দিল্রি বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। অন্যদিকে ফুলে ওঠা যমুনা নদীর জলে বন্যা দেখা দিতে পারে ফরিদাবাদেও। বন্যার আশঙ্কায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।