নয়া দিল্লি: নৃশংস বললেও হয়তো কম বলা হয়! দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ডে (Shraddha Walker Murder Case) পুলিশি চার্জশিটে আফতাবের অত্যাচারের যে বর্ণনা উঠে এসেছে, তা আঁতকে ওঠার মতোই। গত বছরের শেষভাগে দেশজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ড। লিভ ইন সঙ্গী শ্রদ্ধা ওয়াকারকে খুন করে, তাঁর দেহের ৩৫ টুকরো করেছিল প্রেমিক আফতাব পুনাওয়ালা (Aftab Poonawalla)। দেহের টুকরোগুলি রাখার জন্য কিনে এনেছিল নতুন ফ্রিজ। টানা ১৮ দিন ধরে মেহরৌলির জঙ্গল থেকে শুরু করে দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে সেই দেহের টুকরো ফেলে এসেছিল। নৃশংস এই হত্য়াকাণ্ডে গত বছরের নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয় আফতাবকে। এবার তাঁর নৃশংসতার বর্ণনা উঠে আসল পুলিশের চার্জশিটে। সাড়ে ৬ হাজার পাতার চার্জশিট পেশ করেছে দিল্লি পুলিশ। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে আফতাব তাঁর প্রেমিকা শ্রদ্ধার দেহের ৩৫ টুকরো করেছিল এবং কীভাবে তারপর ঘর সাফ করেছিল।
পুলিশের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, বিয়ের জন্য় চাপ নয়, আফতাব ও শ্রদ্ধার মধ্যে নিত্যদিন ঝগড়ার কারণ ছিল আফতাবের সঙ্গে একাধিক যুবতীর বন্ধুত্ব। দিল্লি থেকে দুবাই, বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়েছিল আফতাবের প্রেমিকা। এমনকী, শ্রদ্ধাকে খুনের পরও আফতাবের প্রেমিকাদের আনাগোনা ছিল। শ্রদ্ধাকে খুনেরস পরও যখন আফতাবের প্রেমিকা বাড়িতে আসত, তখন আফতাব ফ্রিজ থেকে শ্রদ্ধার দেহের টুকরো বের করে এনে রান্নাঘরে রেখে দিত। প্রেমিকা চলে যাওয়ার পরে তা আবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখত।
শ্রদ্ধাকে হত্যা ও তারপরে দেহ টুকরো করার জন্য কী কী অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তাও উঠে এসেছে পুলিশের চার্জশিটে। একটি কাটারি, একটি হাতুড়ি ও মোট তিনটি ছুরি ব্যবহার করেছিল আফতাব। শ্রদ্ধার দেহ কাটতে গিয়ে তাঁর নিজের হাতেও চোট লেগেছিল। পরেরদিন সে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখায়, তাঁর হাতে পাঁচটি সেলাই পড়ে।
পুলিশের তদন্তে আগেই জানা গিয়েছিল, হত্যাকাণ্ড গত নভেম্বরে সামনে আসলেও, গত বছরের ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করেছিল আফতাব। গুগল অ্যানালাইসিস করে দেখা গিয়েছে, ১৮ নভেম্বরের পর থেকেই শ্রদ্ধার অ্যাকাউন্ট আফতাবের ফোন থেকে লগ ইন করা ছিল। ১৮ মে, যেদিন আফতাব শ্রদ্ধাকে খুন করেছিল, সেদিন আফতাব জ্যোমাটো অ্যাপ থেকে নিজের জন্য চিকেন রোল অর্ডার করেছিল। এরপরে বিগত তিনদিন ধরে আফতাব প্রচুর পরিমাণ জলের বোতল অর্ডার করেছিল অনলাইনে।
জেরায় আফতাব জানিয়েছে, শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়মিত ঝগড়ার কারণেই সে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে আফতাব বলে, “আমি ওঁকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দিই। তারপরে ওর বুকের উপরে চেপে বসি। দুই হাত দিয়ে গলা টিপে ধরি, যতক্ষণ না ওঁর শ্বাস বন্ধ হয়, ততক্ষণ অবধি আমি গলা চেপে ধরে রেখেছিলাম। শ্রদ্ধাকে খুনের পর তাঁর দেহ বাথরুমে লুকিয়ে রাখি।”
জানা গিয়েছে, ঘর থেকে রক্তের দাগ মুছতে দুটি ৫০০ মিলিলিটারের হার্পিক টয়লেট ক্লিনার ব্লিচ, পলিসেট চপিং বোর্ড, ২টি ৫০০ মিলিলিটারের সাইনেক্স গ্লাস ক্লিনার, একটি ৭২৫ মিলিলিটারের গোডরেজ জার্ম ফাইটার হ্যান্ডওয়াশ, ৫০০ মিলিলিটারের হার্পিক লিকুইড টয়লেট ক্লিনার। যাবতীয় জিনিস ব্লিনকিট অ্য়াপ্লিকেশন থেকে অর্ডার করেছিল আফতাব।
আরও জানা গিয়েছে, শ্রদ্ধার ঠোটে যে ছোট্ট স্টাড ছিল, তা খুলে নেয়। ওই স্টাড ও শ্রদ্ধার মোবাইল একটি বাক্সে ভরে মহারাষ্ট্রের ভাসাইয়ের মানিকপুর পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার পথে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়।