Dheeraj Sahu: স্বাধীনতার সময় দেশকে ৪৭ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন ধীরজ সাহুর বাবা

সিজার মণ্ডল | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Dec 12, 2023 | 9:26 PM

Dheeraj Sahu: কংগ্রেস সাংসদ ধীরজ সাহুর ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার বাড়ি থেকে ৩৫৪ কোটির কালো টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে লোহারদাগায় অবস্থিত ধীরজ সাহুর পৈত্রিক বাড়ি। দেখলে মনে হতে পারে বোধহয় রাজপ্রাসাদ। এলাকায় বাড়িটি পরিচিত 'হোয়াইট হাউস' নামে। স্বাধীনতার অনেক আগেই ধীরজের বাবা বলদেব সাহু, অবিভক্ত বিহারের আওরঙ্গাবাদ থেকে লোহারদাগায় এসেছিলেন।

Dheeraj Sahu: স্বাধীনতার সময় দেশকে ৪৭ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন ধীরজ সাহুর বাবা
বাঁদিকে - রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ধীরজ সাহু, ডানদিকে - আলমারিতে থরে থরে টাকার বান্ডিল
Image Credit source: Twitter

Follow Us

রাঁচি: যে পরিবার স্বাধীনতার সময় দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার জন্য ভারত সরকারকে ৪৭ লক্ষ টাকা এবং ৪৭ কিলোগ্রাম সোনা দিয়েছিল, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও সরকারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিল, আজ সেই পরিবারের সদস্যের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা! মানতে পারছেন না লোহারদাগার বাসিন্দারা। সম্প্রতি, কংগ্রেস সাংসদ ধীরজ সাহুর ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার বাড়ি থেকে ৩৫৪ কোটির কালো টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। অথচ, তাঁর পারিবারিক ইতিহাস জানলে সত্যিই ভাবা যায় না, এই পরিবারের কেউ কালো টাকার পাহাড় গড়তে পারে।

ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে লোহারদাগায় অবস্থিত ধীরজ সাহুর পৈত্রিক বাড়ি। দেখলে মনে হতে পারে বোধহয় রাজপ্রাসাদ। এলাকায় বাড়িটি পরিচিত ‘হোয়াইট হাউস’ নামে। স্বাধীনতার অনেক আগেই ধীরজের বাবা বলদেব সাহু, অবিভক্ত বিহারের আওরঙ্গাবাদ থেকে লোহারদাগায় এসেছিলেন। সেখানে তিনি দেশি মদ এবং পরিবহণের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পারিবারিক ব্যবসার জেরেই অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠেছিল সাহু পরিবার। তবে, লোহার দাগার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বলদেব সাহু শুধু ব্যবসায়ী নয়, পরিচিত ছিলেন সমাজসেবী হিসেবেও।

প্রথম থেকেই সাহু পরিবার ছিল কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ। স্থানীয় কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার সময় ভারতীয় অর্থনীতিকে মজবুত করবার জন্য বলদেব সাহু ভারত সরকারকে ৪৭ লক্ষ টাকা এবং ৪৭ কিলোগ্রাম সোনা দান করেছিলেন। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও সরকারকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্য করেছিল সাহু পরিবার। বলদেব সাহুর পাঁচ ছেলের প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময় কংগ্রেস করেছেন। বড় ছেলে শিবপ্রসাদ সাহু রাঁচি থেকে একাধিকবার লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছেন। ২০০১ সালে তাঁর প্রয়াণ হয়। শিবপ্রসাদের সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৯৭২ সালে লোহার দাগায় এসে হোয়াইট হাউসেই ছিলেন ইন্দিরা। তবে শুধু ইন্দিরা নন, হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চিত্র তারকা, খেলোয়াড়রাও আতিথ্য গ্রহণ করেছেন।

ফলে অর্থনৈতিক প্রভাবের মতোই সাহু পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাবও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল। শোনা যায়, একসময় বিহারের এই অংশে, অর্থাৎ, বর্তমান ঝাড়খন্ডে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিট কে পাবেন, কে মন্ত্রী হবেন – সেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিত সাহু পরিবারই। ধীরজ নিজেও ছাতরা আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে দুবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কিন্তু, দুবারই পরাজিত হয়েছেন। হয়ত, সাহু পরিবারের সদসল্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁর লোভ মানুষের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিল। এরপর, ২০০৯ সালে ঝাড়খণ্ড থেকে রাজ্যসভার আসনে তাঁকে জিতিয়ে এনেছিল কংগ্রেস। সেই সময় থেকে টানা তিনবার তিনি কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন।

সোমবার পর্যন্ত ধীরজ সাহুর ওড়িশা ও রাঁচির বাড়ি থেকে ৩৫৪ টাকা উদ্ধার করেছে আয়কর বিভাগ। যে নগদের কোনও হিসেব নেই। ওই দুই বাড়িতে এখনও তল্লাশি চলছে। ধীরজ সাহুর আরও কালো সম্পত্তির খোঁজ মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। আর সেই সময় একেবারে শুনশান অবস্থায় পড়ে আছে ধীরজের পৈত্রিক বাড়ি, হোয়াইট হাউস। শুধু রয়েছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। তাঁরা জানিয়েছেন সাহু পরিবারের কোনও সদস্যই এখন আর হোয়াইট হাউসে থাকে না। প্রধান ফটকের দুই দিকে রয়েছে বলদেব সাহু ও শিবপ্রসাদ সাহুর দুটি শ্বেত পাথরের আবক্ষ মূর্তি।

Next Article