দিল্লি : রামায়ণ-মহাভারত দেখেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ ভারতীয়র উত্তর হবে হ্যাঁ, টিভিতে। আশির দশকের শেষে টিভিতেই ঝড় তুলেছিল রামায়ন-মহাভারত। মহাভারত ও রামায়নের (Mahabharata-Ramayana) সঙ্গে জুড়ে রয়েছে দেশের মানুষের ধর্মাচরণ, নিষ্ঠা, বিশ্বাস। এবার মাটি খুঁড়ে রামায়ণ-মহাভারত? পান্ডব জীবনশৈলী খুঁজতে দিল্লিতে (Delhi) খনন? হ্যাঁ এটাই চলছে। দেশজুড়ে দুই মহাকাব্যের শিকড়ের খোঁজে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে খননকার্যের নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার। ফেব্রুয়ারি মাসে, রাজধানীর বুকে দেশের সংসদ থেকে মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার দূরত্বে চুপিসারে শুরু হয়েছে খননের কাজ। পুরানা কিলা মুঘল সম্রাট হুমায়ুন তৈরি করেছিলেন বলে মনে করা হয়। এর আগে নাকি সেখানে মৌর্য সাম্রাজ্যের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। এবার উদ্দেশ্য আরও গভীরে যাওয়া। খননের কাজ শুরু হয়েছে, মাটি স্তুপ করে রাখা, কর্মচারীদের জন্য পলিথিনে ঢাকা বিশাল বসবাসের জায়গাও তৈরি হয়েছে।
দিল্লিতে খননকার্যে ৫ বছরে খরচ ১০০ কোটি। সূত্রের খবর, আগামীদিনে দেশজুড়ে, জায়গায় জায়গায় এরকম খোদাই শুরু হবে। তামিলনাড়ু থেকে গুজরাট- প্রায় সর্বত্র। আর তাই সম্ভবত এবার বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রক যার অধীনে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পড়ে, তার বরাদ্দ ১৩% বাড়ানো হয়। ১,১০৩ কোটি টাকা প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে দেওয়া হয়েছে এবছর।
পুরানা কিলায় কেন খোদাই?
এই পুরানা কিলা দিল্লির প্রাচীনতম কিলাগুলির মধ্যে একটি। সংসদ থেকে এই পুরানা কিলার দূরত্ব সাড়ে চার কিলোমিটার। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে দূরত্ব ৫.২ কিলোমিটার। ইন্ডিয়া গেট থেকে দূরত্ব ২.৩ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রীর নিবাস থেকে দূরত্ব সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। মনে করা হচ্ছে এই কিলার নিচেই না কি আরও পুরোনো সভ্যতার নির্দশন আছে। তা খুঁজতেই শুরু হয়েছে খননকার্য। মনে করা হচ্ছে এই খোদাইয়ের হাত ধরেই যাওয়া যেতে পারে মহাভারত-রামায়নের যুগে। তামিলনাড়ুর কাবেরী বদ্বীপ, গুজরাট দ্বারকা ছাড়াও খোদাইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে মহারাষ্ট্রের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায়। একইসঙ্গে খোদাই হতে পারে ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকাতেও। সহজ কথায়, রমায়ন-মহাভারত যোগ খোঁজার জন্য এএসআইকে টাকা ও ক্ষমতা দুই দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। শুধুমাত্র এ বছরই খরচ হবে পাঁচ কোটি টাকা। আগামী বছর খরচ ২০ কোটি টাকা। ৫ বছরে মোট খরচ ১০০ কোটি। আর তাতেই এই ফেব্রুয়ারি থেকে জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে কাজ। দিল্লিতে খননকাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে আলাদা জায়গার। এখন দেখার ‘দক্ষযজ্ঞ’ শেষে হাতে কী আসে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ আবহ, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ডামাডোল, তার মধ্যে এ ধরণের উদ্যোগ যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষিত বলেই মত ইতিহাসবিদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ির।