বেঙ্গালুরু: কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, এই প্রশ্নের গেরোয় পড়েছিল কংগ্রেস। সিদ্দারামাইয়া এবং ডিকে শিবকুমার – দুই শক্তিশালী নেতাই ছিলেন কুর্সির দাবিদার। শেষ পর্যন্ত সিদ্দারাইমাইয়াকেই বেছে নিয়েছিল হাইকমান্ড। অসন্তোষ প্রকাশ করেও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শিবকুমার। তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তবে, কর্নাটক কংগ্রেসে এই ‘শান্তি’ কতদিন বজায় থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন খোদ শিবকুমার। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে কার্যত ‘ভীতু’ বললেন তাঁর ডেপুটি। প্রথম মেয়াদে এক প্রকল্পের রূপায়ণ করতে গিয়েও, জনগণের একাংশের প্রতিবাদের জেরে পিছিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলে মন্তব্য করেন শিবকুমার। সেই সঙ্গে জানান, তিনি হলে ওই প্রকল্প রূপায়ণ করেই ছাড়তেন। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য কংগ্রেসের প্রধানের এই মন্তব্যে হইচই পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অনেকেই মনে করছেন কংগ্রেসের জন্য কর্নাটক রাজস্থান ২.০ হয়ে উঠতে পারে।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) ছিল কেম্পেগৌড়ার জন্মদিবস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সময় তিনি এক গ্রামপ্রধান ছিলেন। ষোড়শ শতকে তাঁর হাত ধরেই জন্ম হয়েছিল বেঙ্গালুরু শহরের। তাঁর জন্মদিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুড়ঙ্গ ও ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রসঙ্গ তোলেন শিবকুমার। তিনি জানান, এই ধরনের প্রকল্পগুলির রূপায়নের ক্ষেত্রে অনেক রকম চ্যালেঞ্জ আছে। অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল জনগণের একাংশের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ২০১৭ সালের এক ঘটনার উদাহরণ টানেন তিনি। শিবকুমার জানান, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্দারামাইয়া এবং বেঙ্গালুরু শহর উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন কেজে জর্জ। শহরে একটি ইস্পাতের ফ্লাইওভার তৈরির পরিকল্পনা করেছিল সরকার। কিন্তু, সেই নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হতেই পিছিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। শিবকুমার বলেন, “প্রতিবাদ দেখে ওঁরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। আমি হলে, প্রতিবাদের শোরগোলে পিছিয়ে আসতাম না। প্রকল্পটি করেই ছাড়তাম।”
ওই অনুষ্ঠানে সিদ্দারামাইয়া ছিলেন না। তবে, সরকার গঠনের এক মাসের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তাঁর ডেপুটির এই মন্তব্য সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এমনিতেই বিরোধীরা বলে থাকেন, সমস্ত অনুষ্ঠানেই শিবকুমারই কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় থাকেন। সিদ্দারামাইয়ার আগে বক্তব্য রাখেন প্রদেশ কংগ্রেস প্রধানই। এই অবস্থায় পরিস্থতি সামাল দিতে আসরে নেমেছেন কর্নাটকের মন্ত্রিসভার সদস্য প্রিয়ঙ্ক খাড়্গে। তাঁর মতে, “সিদ্দারামাইয়া মোটেই ভীতু নন, তিনি একজন সংবেদনশীল মানুষ। কখনই জনমত উপেক্ষা করেন না।” তাঁর মতে অনেক সময়ই সমাজে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। যার জেরে উন্নয়নের কাজ থমকে যায়। প্রিয়ঙ্ক খাড়্গে দাবি করেছেন, আসলে শিবকুমার সেই কথাই বলতে চেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, তা বলতে চাননি।
বরাবরই, ডাকাবুকো নেতা হিসেবে পরিচিত ডিকে শিবকুমার। অন্যদিকে, সিদ্দারামাইয়াকে মানুষ চেনে তাঁর সামাজিক প্রকল্পগুলি দিয়ে। কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে জয়, নতুন করে অক্সিজেন দিয়েছে কংগ্রেসকে। এর মধ্যে এই দুই ভিন্নধর্মী নেতার দ্বন্দ্ব যদি এভাবে চলতেই থাকে, তাহলে কিন্তু রাজস্থান ২.০ হয়ে ওঠা থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না কংগ্রেসকে।