Dr. Dilip Mahalanabis: নিঃসাড়ে চলে গেলেন ORS-এর উদ্ভাবক ডা. দিলীপ মহলানবিশ

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Oct 16, 2022 | 7:27 PM

Dr. Dilip Mahalanabis: প্রয়াত ডা. দিলীপ মহলানাবিশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রথম ওআরএস চিকিৎসার উদ্ধাবন করেছিলেন।

Dr. Dilip Mahalanabis: নিঃসাড়ে চলে গেলেন ORS-এর উদ্ভাবক ডা. দিলীপ মহলানবিশ
প্রয়াত ওআরএস-এর আবিষ্কর্তা ডা. দিলীপ মহলানাবিশ

Follow Us

কলকাতা: গত বছরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। তবে, সকলের অগোচরেই থেকে গিয়েছেন এক নম্র স্বভাবের বাঙালি ডাক্তার। অথচ, তাঁর সেই সময়ের পদক্ষেপ, ১৯৭১ সাল থেকে ভারত এবং সারা বিশ্বে অন্তত ৭ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে। বেশিরভাগই শিশু। ৭১’এর যুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ কলেরা মহামারির সময়ে শিরায় দেওয়ার তরল স্যালাইন ফুরিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের সহায়তায়, ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ওআরএস তৈরি করেছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা ক্লিনিক্যাল বিজ্ঞানী ডা. দিলীপ মহলানাবিশ। শনিবার রাতে, প্রায় কোনও স্বীকৃতি ছাড়াই নিঃসারে চলে গেলেন এই চিকিৎসক।

শনিবার রাতে ইএম বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিশিষ্ট চিকিৎসক। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকলেই ডায়রিয়াজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য ওআরএস ব্যবহার করেন। ল্যানসেট জার্নাল বিংশ শতকের ‘সম্ভাব্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা অগ্রগতি’ বলে অভিহিত করেছিল। কিন্তু, ডা. দিলীপ মহলানবিশ বিস্মৃতই থেকে গিয়েছেন। তাঁর কৃতিত্বের জন্য কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে যথাযথ স্বীকৃতি পাননি।

১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়, পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর এক শরণার্থী শিবিরে চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডা. দিলীপ মহলানবিশ। তখনও পর্যন্ত ডায়েরিয়ার একমাত্র চিকিৎসা ছিল শিরায় তরল স্যালাইন দেওয়া। কিন্তু, চাহিদা অনুযায়ী শিবিরে পর্যাপ্ত স্যালাইন ছিল না। এই এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ডা. দিলীপ মহলানাবিশ, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের সহায়তায় শিবিরের বাসিন্দাদের জন্য ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি বা ওআরটি ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। চার চা চামচ টেবিল সল্ট, তিন চা চামচ বেকিং সোডা এবং ২০ চা চামচ বাণিজ্যিক গ্লুকোজের মিশ্রণে ওআরএস তৈরি করেছিলেন।

পরে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ডা. দিলীপ মহলানবিশ বলেছিলেন, “বনগাঁ হাসপাতালের দুটি কক্ষের মেঝেতে গুরুতর অসুস্থ কলেরা রোগীরা পড়েছিলেন। এদের ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন দিয়ে চিকিত্সা করার জন্য আক্ষরিক অর্থে তাদের মল, মূত্র এবং বমির মধ্যে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে হয়েছিল। সেখানে পৌঁছানোর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমরা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছি। কারণ সেখানে পর্যাপ্ত স্যালাইন ছিল না। আমার দলের মাত্র দুই সদস্যকে আইভি তরল দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।” এই পরিস্থিতিতে তখনও পর্যন্ত গবেষণাগারের ঘেরাটোপে থাকা ওআরএস ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন ডা. মহলানবিশ। ওআরএস ব্যবহারের ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা শিবিরগুলিতে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ থেকে ৩.৬ শতাংশে নেমে এসেছিল। কীভাবে লবণ এবং গ্লুকোজ মিশিয়ে ওআরএস তৈরি করা হয়, তার বর্ণনা একটি গোপন বাংলাদেশী রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল। ঘুরে গিয়েছিল যুদ্ধের গতি।

এই অসাধারণ অবদানের জন্য, ১৯৯৪ সালে, রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডা. মহলানবিশ। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোলিন পুরস্কার, ২০০৬ সালে থাইল্যান্ড সরকারের কাছ থেকে প্রিন্স মাহিদোল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আশ্চর্যজনক হল, ডায়রিয়ার চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটিয়ে বিশ্বব্যাপী উচ্চ প্রশংসা পেলেও, নিজের দেশেই স্বীকৃতি পাননি এই বাঙালি চিকিৎসক।

Next Article