নয়া দিল্লি: সোমবারই সংসদে পেশ হয়েছে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২২। বিল পেশ হওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভের ছবি দেখা গিয়েছে দেশের একাধিক রাজ্যে। মূলত বিদ্যুৎ পরিষেবা সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররাই এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তবে পঞ্জাবে সেই বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়েছে অনেক দূর। সে রাজ্যে কৃষকরা বিলের কপি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সরব হয়েছে আম আদমি পার্টি, কংগ্রেস, শিরোমনি অকালি দলের মতো পঞ্জাবের দলগুলি।
কেন্দ্রীয় বিদ্য়ুৎ মন্ত্রী আরকে সিং দাবি করেছেন, এই বিল সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই পেশ করা হয়েছে। ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বদল আসছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, কোনও রাজ্য চাইলে সেখানকার নাগরিকদের বিদ্যুৎ পরিষেবায় ভর্তুকি দিতে পারে, প্রয়োজনে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহও করতে পারে। এতে কৃষকদের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবৎ মানের দাবি, এই ধরনের বিল পেশ করার মাধ্য়মে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত করা হচ্ছে।
পঞ্জাবের ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অজয়পাল সিং জানান, এই বিলের ৪২ নম্বর ধারা সংশোধনের মাধ্যমে বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইসেন্স বা অনুমোদন দেওয়া হবে। এ ছাড়া ১৪ নম্বর ধারা সংশোধন করলে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সরকারি নেটওয়ার্ক ব্য়বহার করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। এর ফলে বাড়বে প্রতিযোগিতা।
আদতে গ্রাহকেরা কোন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেবে, তা বেছে নিতে পারবে। ঠিক যে ভাবে টেলিকম সংস্থা বেছে নেন গ্রাহকেরা।
মুখ্যমন্ত্রী: পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবৎ ভগবৎ মান উল্লেখ করেছেন, সংবিধান অনুসারে বিদ্য়ুৎ হল ৩৮ টি বিষয়ের মধ্য়ে একটি। যে ৩৮ টি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে সংবিধানের ‘কংকারেন্ট লিস্ট’-এ। অর্থাৎ এই বিষয়গুলির ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়েই আইন প্রনয়ণ করতে পারে। তাঁর দাবি, নয়া সংশোধনী এনে সাংবিধানিক পরিকাঠামো লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
কৃষক সংগঠন: কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল যে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা, তাদের দাবি, এই সংশোধনী কার্যকর হলে দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী মানুষকে আর বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না।
বর্তমানে পঞ্জাব সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। তার জন্য খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতি পরিবারকে দু মাসে ৬০০ ইউনিটের বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের আওতায় রয়েছে ৬১ লক্ষ পরিবার। এর জন্য ভর্তুকি দিতে হয় ১৮০০ কোটি টাকার।
পঞ্জাবের ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পদমজিৎ সিং-এর দাবি সংশোধনী বিল পাশ হলে সরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থাগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। কিছু বেসরকারি সংস্থার আধিপত্য বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে, পঞ্জাব ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক অজয়পাল সিং-এর দাবি, এই বিল পাশ হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে বা বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়বে না। তিনি আরও ব্যাখ্য়া করেন, ইউকে-তে এমন মডেলের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী হয়েছেন সাধারণ মানুষ। দেখা গিয়েছে, শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল দিতে হয়েছে।