লখনউ: বর্তমানে কোনও মাফিয়া বা গুণ্ডা নয়, উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে নেকড়ে। মানুষখেকো নেকড়ে। নেকড়ে ধরার জন্য সরকার সর্বশ্তি প্রয়োগ করেছে। কিন্তু সে ধরা পড়েনি, তার আক্রমণও থামেনি। তীব্র আতঙ্কে কাঁপছে বাহরাইচ ও সীতাপুর। বাধ্য হয়ে নেকড়েটিকে গুলি করার নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছে সরকার। কিন্তু আচমকা কীভাবে তৈরি হল এই নেকড়ের আতঙ্ক? বিশেষজ্ঞদের মতে, নেকড়েরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়। আর এই নেকড়ের মানুষখেকো হওয়ার পিছনে সম্ভবত রয়েছে পুরোনো শত্রুতা। ২৫ বছর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।
গত মার্চ মাস থেকেই নেকড়ের আতঙ্কে কাঁপছে বাহরাইচের মাহসি মহকুমার মানুষ। বর্ষা নামার পর নেকড়ের হামলা আরও বেড়েছে। গত জুলাই মাস থেকে এই পর্যন্ত নেকড়ের হামলায় অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে সাতজনই শিশু। এছাড়া প্রায় ৩৬ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে শিশু তো আছেই, আছে মহিলা ও বৃদ্ধরাও। উত্তর প্রদেশ বনবিভাগের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত মানুষখেকো সন্দেহে চারটি নেকড়ে ধরা হয়েছে। তবে, তারপরও নেকড়ের হামলা থামেনি। তাই বনকর্তাদের অনুমান, ধরা পড়া নেকড়েগুলি সম্ভবত মানুষখেকো নয়।
নেকড়েরা সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না, এড়িয়েই চলে। তাহলে কীকরে ওই এলাকায় এই মানুষখেকো নেকড়ের আবির্ভাব ঘটল? বনকর্তাদের দাবি, আসলে নেকড়ের ভয়ঙ্কর প্রতিশোধস্পৃহা থাকে। সেই স্পৃহা থেকেই সম্ভবত মানুষের উপর হামলা করছে তারা। ভারতীয় বন পরিষেবার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জ্ঞানপ্রকাশ সিং, এক সময় বাহরাইচ জেলার কাতারনিয়াঘাট বন্যপ্রাণ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, নেকড়েদের এই প্রতিশোধ ওই অঞ্চলে আগেও দেখা গিয়েছে। তাঁর মতে, সম্ভবত ঘাতক নেকড়ের শিশুদের ক্ষতি করেছিল কোনও মানুষ। তাই প্রতিশোধ নিতে হামলা চালাচ্ছে তারা।
তিনি ২৫ বছর আগের এক কাহিনি জানিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের জৌনপুর ও প্রতাপগড় জেলায় সাঁই নদীর অববাহিকায় নেকড়ের আক্রমণে ৫০-এরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনার তদন্তে জানা গিয়েছিল, কিছু বাচ্চা ছেলে নেকড়েদের আস্তানায় ঢুকে তাদের দুই সন্তানকে হত্যা করেছিল। সেই ঘটনার পরই অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল নেকড়েরা। বন বিভাগের অভিযানের সময়, কয়েকটি নেকড়ে ধরা পড়েছিল। কিন্তু, মানুষখেকো নেকড়ে দম্পতিটি খালি পালিয়ে বেড়াচ্ছিল এবং চলছিল তাদের প্রতিশোধ। শেষ পর্যন্ত তাদের সনাক্ত করে গুলি করে মারা হয়েছিল। সেই থেকে মানুষের উপর নেকড়ের হামলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বাহরাইচেও একই রকম ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার এই উপদেষ্টা, জ্ঞানপ্রকাশ সিং। তাঁর মতে, বাহরাইচের মাহসি মহকুমার গ্রামের হামলার ধরণও একই রকম। তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাহরাইচে একটি ট্রাক্টরের চাপায় দুই নেকড়ে শাবকের মৃত্যু হয়েছিল। ক্রুদ্ধ নেকড়েরা আক্রমণ শুরু করলে, তাদের ধরে ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরের চকিয়া জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, চকিয়া নেকড়ের প্রাকৃতিক আবাসস্থল নয়। তাই, চকিয়া থেকে সম্ভবত তারা ফের ঘাঘরা নদীর তীরে ফিরে এসেছে এবং প্রতিশোধ নিতে একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছে।
বাহরাইচের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার, অজিত প্রতাপ সিং-ও বলেছেন, “সিংহ ও চিতাবাঘের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা নেই। কিন্তু নেকড়েরা তা করে। যদি তাদের আস্তানায় কোনও ঝামেলা করা হয়, তাদের ধরা বা মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়, তাদের শিশুদের কোনও ক্ষতি করা হয়, তাহলে নেকড়েরা মানুষদের শিকার করে তার প্রতিশোধ নেয়।” দেবীপাটনের বিভাগীয় কমিশনার, শশীভূষণ লাল সুশীল বলেন, “যদি মানুষখেকো নেকড়েদের ধরা না যায় এবং তাদের আক্রমণ চলতেই থাকে, তাহলে শেষ উপায় হিসেবে আমাদের গুলি করতেই হবে। ওদের ধরার জন্য বাহরাইচের মাহসি মহকুমা এলাকায় থার্মাল ড্রোন এবং থার্মোসেন্সর ক্যামেরা বসানো হয়েছে।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)