নয়া দিল্লি : রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা ইউক্রেন জুড়ে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যেই আটকে পড়েছিলেন বহু ভারতীয়। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই কিয়েভে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে বারবার নির্দেশিকা জারি করে সেখান থেকে দেশে আসার কথা বলা হয়েছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। সেইসময় ইউক্রেনে আটকে পড়েন বহু ভারতীয় নাগরিক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বহু পড়ুয়াও। ভারত তার ‘অপারেশন গঙ্গা’ উদ্ধারাভিযানের মাধ্যমে বহু ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। মঙ্গলবার ভারতের উদ্ধারাভিযান নিয়েই বললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি এদিন বলেছেন যে, ২২,৫০০ এর বেশি ভারতীয় নাগরিকদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিন সংসদের উচ্চ কক্ষে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, “এই সংঘাতের ফলে তৈরি হওয়া সংকটের মধ্যেও আমরা করেছি যে প্রায় ২২,৫০০ নাগরিকের নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসা নিশ্চিত করেছি।” তিনি আরও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা অপারেশন গঙ্গা চালু করেছিলাম। যার ফলে সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং উদ্ধারাভিযান গ্রহণ করা হয়েছিল। আমাদের সম্প্রদায় ইউক্রেন জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।” তিনি সংসদে উল্লেখ করেছেন, “লক্ষণীয় যে শত্রুতা ২০,০০০ এর বেশি ভারতীয় নাগরিককে সরাসরি বিপদে ফেলে দিয়েছিল। এমনকি যখন আমরা রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছিলাম, তখনও আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া এবং তারা যাতে কোনও ক্ষতির সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।” তিনি আরও বলেছেন, “এই উদ্ধারাভিযান এমন এক সময়ে করা হয়েছিল যখন বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ সহ সামরিক অভিযান চলছিল।”
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে বায়ুসেনার সি-১৭ বিমান উদ্ধারাভিযানে ব্যবহার করা হয়েছিল। ভারতীয়দের উদ্ধারাভিযানের কাজে বিভিন্ন বাধা সামনে এসেছিল। যেমন, রাশিয়ার মিসাইল হামলায় ইউক্রেনের এয়ারস্পেস বন্ধ হয়ে যায়। সেইসময় ভারতীয়দের দেশে ফেরা একটি আশঙ্কায় পরিণত হয়। কিন্তু ভারত সরকার ইউক্রেনেরে সীমন্তবর্তী বিভিন্ন দেশ যেমন রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং স্লোভেনিয়া দিয়ে দেশে ফেরানো হয়েছিল নাগরিকদের। এদিন বিদেশমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে কথা বলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে খারকিভ এবং সুমিতে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। এই উদ্ধারাভিযান চলাকালীন প্রায় প্রতিদিন পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন বলে জানিয়েছেন এস জয়শঙ্কর।