কলকাতা: হেঁসেলে কদর বাড়ছে গ্যাস সিলেন্ডারের। বরাবরই কেতাদুরস্থ ভঙ্গিমা তার। দূরত্ব বজায় রেখে চলে আলু, পেঁয়াজ, সর্ষের তেলের থেকে। কেনই বা হবে না। হেঁসেলের অপরিহার্য বস্তু সে। প্রতিদিন দেশজুড়ে তাকে নিয়ে চর্চা। রাজনৈতিক উত্তাপ। উত্তরোত্তর গ্যাসের দাম বৃ্দ্ধির জন্য সরকারকে তুলোধনা বিরোধীদের। এর মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে রান্নার গ্যাসের দামের অভিনব ‘ব্রেক আপ’। এলপিজি গ্যাসের উপর রাজ্য ৫৫ শতাংশ কর চাপায়! তার জন্য নাকি গ্যাসের দরের এত হাঁকডাক। আর অন্যদিকে কেন্দ্র কর নেয় মাত্র ৫ শতাংশ! স্বভাবতই, এই পোস্ট ভাইরাল হওয়ায়, রাজ্যের দিকেই আঙুল তুলছেন নেট নাগরিকরা। কিন্তু এই তথ্য আদৌ কি সত্যি?
ভুয়ো ভাইরাল তথ্য:
সোশ্যাল মিডিয়া যে পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে বেসিক গ্যাসের মূল্য মাত্র ৪৯৫ টাকা। কেন্দ্র কর নিচ্ছে ৫ শতাংশ হিসাবে ২৪.৭৫ টাকা। পরিবহণ খরচ ১০ টাকা। রাজ্য কর নিচ্ছে ৫৫ শতাংশ হারে ২৯১.৩৬ টাকা। রাজ্যে পরিবহণ খরচ ১৫ টাকা। ডিলার কমিশন ৫.৫০ টাকা। আর ভর্তুকি ১৯.৫৭ টাকা। সব নিয়ে একটি গ্যাস সিলেন্ডারের দাম ৮৬১.১৮ টাকা। এই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, রাজ্য ৫৫ শতাংশ কর নেওয়ায় গ্যাসের দাম এত বেড়েছে। এই পোস্ট কিছু রাজনৈতিক ফেসবুক পেজ থেকেও শেয়ার করা হয়।
আসল সত্যিটা কী?
১) এই পোস্টটি সবথেকে বিভ্রান্তিমূলক জায়গা হল কর। সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)-র ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এলপিজি জিএসটির (GST) আওতায় পড়ে। ৫ শতাংশ হারে জিএসটি নেওয়া হয়। অর্থাৎ ২.৫ শতংশ করে কর ভাগ হয়ে যায় কেন্দ্র (সিজিএসটি) ও রাজ্যের (এসজিএসটি/ইউজিএসটি) মধ্যে। রাজ্যের ৫৫ শতাংশ কর নেওয়া সম্পূর্ণ ভুয়ো তথ্য। কেন্দ্র ৫ শতাংশের পরিবর্তে পায় ২.৫ শতাংশ।
২) ওই পোস্টে ডিলার কমিশন নিয়েও ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস মন্ত্রকের পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেল (PPAC)-র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ডিলাররা কমিশন পায় ৬১.৮৪ টাকা। পোস্টে দাবি করা হয়েছে মাত্র ৫.৫০ টাকা।
৩) পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, রান্নার গ্যাসের বেসিক দাম ৭০৮.৬৩ টাকা। ডিলার কমিশন ৬১.৮৪ টাকা। জিএসটি ৩৮.৫৩ টাকা। মোট ৮০৯ টাকা দাম পড়ছে প্রতি সিলেন্ডার (১ জুন, ২০২১)।