Republic Day 2022: প্রজাতন্ত্র দিবসেই ‘বিরাট’ বিদায়, রাষ্ট্রপতির লিমুজ়িনের পাশে আর দেখা যাবে না তাঁকে
Republic Day: ২০০৩ সালের ৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপতির অন্যতম প্রধান সঙ্গী ছিল বিরাট। ১৩ বছর ধরে কমান্ড্যান্টের চার্জার হিসাবে, সে রাষ্ট্রপতিকে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপ্রধানদের পরিদর্শন করার জন্য আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার নেতৃত্বে ছিল।
নয়া দিল্লি: বিদায় কখনই সহজ নয়। কর্মজীবনের শেষদিন যখন চলে আসে, আবেগ তখন কোনও বাধ মানেনা। বুকে অনভূত হয় চাপা যন্ত্রণা অথবা চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসে জল। মনুষ্য জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি নিজের অভিব্যক্তি ব্যাপ্ত করতে পারা, তবে পশুর ক্ষেত্রে কি সেই নিয়ম খাটে? হয়তো না বা আমাদের অজানা। বুধবার দেশের ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অনেকের অজান্তেই এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল দিল্লির রাজপথ। বিদায়ের দিনেও শেষবারের মতো দায়িত্ব পালন করল ‘বিরাট’। না বিরাট কোহলির কথা হচ্ছেনা। এই বিরাট-কে দেশের সবথেকে সেরা ঘোড়া বা বলা যেতে পারে ঘোড়াদের রাজা। দেশের সব প্রেসিডেন্টের বডিগার্ড টিমে একদল ঘোড়া রয়েছে। তাদের ‘ক্যাপ্টেন’ এই বিরাট। সে নিজেও একটা কালো ঘোড়া। বিরাট রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী কমান্ড্যান্টের চার্জার। বিরাট নামের ঘোড়াটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাচীনতম রেজিমেন্টের গর্ব এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত প্রভাবশালী। দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের সময় অবসর নেওয়া বিরাটকে আদরে ভরিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোভিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
What a handsome duo, Col. Dhiraj Chengappa and his horse Virat! #PBG pic.twitter.com/7AXEr2cOcg
— Kaveri ?? (@ikaveri) November 18, 2017
A touching moment as Virat, trusty steed of Commandant President's Body Guard is brought forward to bid farewell to @rashtrapatibhvn and @narendramodi . He's retiring after 19 years in PBG, 13 of them as Commandant's charger. pic.twitter.com/SLEL8td5rm
— Rohit Agarwal ?? (@ragarwal) January 26, 2022
বুধবার শেষ বারের মতো রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের লিমুজ়িনকে এসকর্ট করে রাজপথ অবধি নিয়ে গিয়েছিল বিরাট। এবার থেকে আর দেশের প্রথম নাগরিকের কনভয়ে তাঁর স্থান হবে না, অবসরের বয়স হয়ে গিয়েছে যে। বিরাটের বিদায়ে সবথেকে বেশি মন খারাপ রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সকলের অগোচরে বিরাট নিয়ে তৈরি হয়েছে আবেগঘন পরিস্থিতি। ১৭৭৩ সালে তৈরি রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী বাহিনীর ঘোড়া রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথ অবধি পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। আপনি যদি রাষ্ট্রপতি নিরাপত্তারক্ষীদের বাকি ঘোড়াগুলির দিকে নজর দেন, ফারাকটা স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে কেন বিরাট বাকিদের তুলনায় আলাদা। তাঁর মধ্যে রাজকীয়তার ছাপ স্পষ্ট।
২০০৩ সালের ৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপতির অন্যতম প্রধান সঙ্গী ছিল বিরাট। ১৩ বছর ধরে কমান্ড্যান্টের চার্জার হিসাবে, সে রাষ্ট্রপতিকে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপ্রধানদের পরিদর্শন করার জন্য আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার নেতৃত্বে ছিল। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের থেকে জানা গিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সময় রাজপথে উল্লাসের মধ্যে তাঁর আরোহীর ক্ষীণতম ফিসফিস শোনার ক্ষমতা তাঁকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ঘোড়া করে তুলেছিল। দূর থেকে বন্দুকের আওয়াজ বা ব্যান্ডে জাতীয় সঙ্গীত কোনও কিছুতেই ভয় পেতে দেখা যায়নি বিরাটকে। সবকিছুতেই সে ধীর, স্থির- কর্তব্যে অবিচল। অসংখ্য দর্শকরে মাঝেও তাঁর আত্মবিশ্বাস বারবার প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৯৭ সালে ৩ টি স্ট্যালিওয়ের সঙ্গে আমদাকি করা ভলক্যানো প্রজাতির ঘোড়া থেকে অশ্বপ্রজননের মাধ্যমে জাতিতে হ্যানোভেরিয়ান বিরাটের জন্ম হয়। তাঁর চকচকে লেজ, নরম চোখ দেখে মনে গলে যায়। তাঁর শান্ত স্নিগ্ধ স্বভাব, সাহসী মনোভাব বাকিদের থেকে তাঁকে আলাদা করে রেখেছে। এখানেই সে বাকিদের থেকে আলাদা। তাইতো তাঁকে নিয়ে অনেকেরই আগ্রহের সীমা নেই। এটাই বিরাটকে কিংবদন্তি করে তোলে। যারা বছরের পর বছর ধরে তাঁর আশেপাশে রয়েছেন তাঁরা এমন একটি মুহূর্ত মনে করতে পারবেন না যখন বিরাট চলার সময় ঝাঁকুনি দিয়েছে। আরও একটি জেনে রাখার মতো বিষয়। গত সপ্তাহের সেনা প্রধান নারাভানে বিরাটকে সিওএএস কম্যান্ডেশন কার্ড দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ফরিয়াদের পরে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী ঘোড়াকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। অবসর নিলেও বিরাট পেনশন পাবে, তা অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বাকি জীবনটা কাটবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। বেঁচে থাকুক, ভাল থাকুক বিরাট। তাঁর অবসরের দিনও সে অনেকে কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেল।
আরও পড়ুন: Republic Day 2022: স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়া থেকে প্রজাতন্ত্রের যাত্রা, কেমন সেই ইতিহাস?