AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Republic Day 2022: স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়া থেকে প্রজাতন্ত্রের যাত্রা, কেমন সেই ইতিহাস?

Republic Day History: ১৯৫০ সালের এই দিনেই গৃহীত হয় ভারতীয় সংবিধান। বর্তমান সংখ্যাগত দিক থেকে সংবিধানের মধ্যে পূর্বের মতোই ৩৯৫ টি ধারা থাকলেও বাস্তবে প্রায় ৪৬০ টি ধারা, অসংখ্য উপধারা এবং ১২ টি তফশিলি রয়েছে।

Republic Day 2022: স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়া থেকে প্রজাতন্ত্রের যাত্রা, কেমন সেই ইতিহাস?
জেনে নিন প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস, নিজস্ব চিত্র
| Edited By: | Updated on: Jan 26, 2022 | 11:20 AM
Share

নয়া দিল্লি: ৭৩ বছর। ৭৩ তম। স্বাধীন ভারতে গণতন্ত্র উদযাপনের প্রথম পদক্ষেপ করা হয়েছিল এই দিনেই। ২৬ জানুয়ারি। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day)। স্বাধীন ভারতের প্রথম সংবিধানের প্রস্তাব গ্রহণ। স্বাধীন ভারতের গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা। ১৯২৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেস দাবি তুলেছিল পূর্ণ স্বরাজের। আর ১৯৫০ সালের এই দিনেই গৃহীত হয় ভারতীয় সংবিধান।

কী বলছে ইতিহাস?

১৯৪৭-এ স্বাধীনতা লাভ। ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন থেকে অব্যাহতি। কিন্তু স্বাধীন ভারতের সংবিধান কোথায়? অতএব, কাজ চালানোর মতো করেই ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’-এর সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী স্বাধীন ভারতের শাসনকার্য শুরু হয়। কিন্তু কতদিন এভাবে চলা? ক্রমেই স্বাধীন ভারতে সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে শুরু করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার  পরে সংবিধান সভার ঘোষণা করা হয়। ড. বিআর আম্বেদকর, জওহরলাল নেহরু, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে সংবিধান সভা তৈরি করা হয়। স্বাধীনতার বছরেই অগস্ট মাসে  স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন আম্বেদকর। ওই বছরেই ৪ নভেম্বর  সংবিধান সভায় খসড়াটি জমা দেওয়া হয়।

তারপর কাটে আরও ২ বছর। নানা আলাপ-আলোচনার পর প্রস্তাবিত সংবিধানে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন এনে শেষে ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়। সভার ৩০৮ জন সদস্য ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের দু’টি হাতে লেখা কপিতে সই করেন। এর একটি ছিল ইংরেজিতে ও অন্যটি হিন্দিতে। ঠিক তার দুই দিন পরেই ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত।

সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে প্রস্তাবনা 

প্রত্যেক দেশের সংবিধানের নিজস্ব একটি দর্শন থাকে।  একটি সংবিধানের দর্শন বলতে বোঝায় সাধারণত গৃহীত নীতিসমূহ যেগুলির উপর ভিত্তি করে সংবিধান দাঁড়িয়ে থাকে। প্রস্তাবনা হল ভারতীয় সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তি। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার মধ্যে গণ-সার্বভৌমিকতা, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার, চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে  স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠার সংকল্পও ঘোষিত হয়।

১৭৮৭ সালে প্রণীত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অনুকরণে ভারতীয় সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা সংযুক্ত হয়েছে। ১৯৭৬ সালে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের মূল প্রস্তাবনার সঙ্গে কিছু অংশ সংযোজিত হয়ে বর্তমানের প্রস্তাবনাটি তৈরি হয়।

স্বাধীন ভারতের সংবিধানের টুকরো ইতিহাস একনজরে 

১. ভারতের সংবিধান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও জটিলতম সংবিধান। বর্তমান সংখ্যাগত দিক থেকে সংবিধানের মধ্যে পূর্বের মতোই ৩৯৫ টি ধারা থাকলেও বাস্তবে প্রায় ৪৬০ টি ধারা, অসংখ্য উপধারা এবং ১২ টি তফশিলি রয়েছে। বিশ্বের অন্য কোনও দেশের সংবিধানের এত বেশি ধারা, উপধারা, তফশিল নেই।

২. প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফিস্ট প্রেম বিহারী নারায়ণ রায়জাদা পন্ডিত নেহরুর অনুরোধে দীর্ঘ ছয় মাসের প্রচেষ্টায় এই বিপুল কাজটি একা হাতে সম্পন্ন করেন। গোটা কাজের জন্য এক টাকাও পারিশ্রমিক নেননি তিনি।

৩. ২৫১ পৃষ্ঠার আকর গ্রন্থটির ওজন ৩ কিলো ৭৫০ গ্রাম।

৪. সংবিধানের প্রতিলিপি ছিল দুটি, একটি হিন্দি ও অপরটি ইংরেজিতে লেখা। হাতে লেখা সংবিধানের প্রথম প্রতিলিপি দুটি হিলিয়াম পূর্ণ বদ্ধ পাত্রে সংসদ ভবনে সংরক্ষিত।

৫. লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মিশ্রণ। যেরকম সংবিধানের ৭৫ নম্বর ধারায় মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে উল্লেখ থাকলেও ভোটগ্রহণের সময়ে সরকার পক্ষের পরাজয় ঘটলে মন্ত্রিসভার পদক্ষেপ করা নিয়ে কিছু লেখা নেই।

৬. সংবিধানে কেবল লেখা নেই, রয়েছে শিল্পকলাও। সংবিধান ভরে উঠেছে তুলির টানে, নকশায়। সেই নকশা করেছেন নন্দলাল বসু ও শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা। রামায়ণ মহাভারত থেকে বেদ পুরাণ, সুভাষচন্দ্র, টিপু সুলতান, সম্রাট অশোকের ছবিও রয়েছে সংবিধানে। রয়েছে, সমন্বয়ের বার্তা।

প্রজাতন্ত্র দিবসের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য 

১. রাজপথে সাধারণতন্ত্র দিবসের উদযাপন শুরু হয় ১৯৫৫ সালে। এর আগে এই রাস্তার নাম ছিল কিংসওয়ে। যার নাম পরিবর্তন করে করা হয় রাজপথ।

২. প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ল্লিতে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। আট কিলোমিটারের কুচকাওয়াজ শুরু হয় রাইসিনা হিল থেকে। এর পরে রাজপথ, ইন্ডিয়া গেট হয়ে লালকেল্লায় এর শেষ হয়।

৩. জাতীয় সঙ্গীতের সময়ে ২১টি তোপের সেলামি দেওয়া হয়। জাতীয় সঙ্গীতের শুরু থেকেই এই সেলামি দেওয়া শুরু হয় ও ৫২ সেকেন্ডে জাতীয় সঙ্গীত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এরও সমাপ্তি ঘটে।

৪. ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি কুচকাওয়াজ রাজপথের পরিবর্তে তৎকালীন ইর্ভিন স্টেডিয়ামে বর্তমানে ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়।

৫. প্রথম সাধারণতন্ত্র  দিবস উপলক্ষে দিল্লির পুরনো কেল্লা থেকে প্রথমবারের মতো তেরঙা পতাকা উত্তোলন করেন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ।

এ বছর ভারতের ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। কোভিড কাঁটায় অনুষ্ঠানেও অনেক কাটছাঁট করা হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে কুচকাওয়াজ সহ এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই বছর যেহেতু স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ, তাই “আজাদি কা মহোৎসব”ও পালন করা হচ্ছে। রাজপথে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানও শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

করোনাকালেই প্রজাতন্ত্র দিবস পালন হওয়ায়, অনুষ্ঠান দেখতে যারা আসবেন, তাদের জন্য একাধিক বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে দিল্লি পুলিশের তরফে। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড দেখতে যাঁরা আসবেন, তাঁদের সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত হতে হবে। ১৫ বছরের কম বয়সীদের এবারের অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এছাড়াও সকল দর্শককেই সঙ্গে করোনা টিকাকরণের সার্টিফিকেট রাখতে হবে এবং মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্বের মতো করোনাবিধি মেনে চলতে হবে।

আরও পড়ুন: Republic Day: বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘ড্রাই ডে’, প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিশেষ ঘোষণা আবগারি কমিশনের