নয়া দিল্লি : ঝটিকা সফরে দিল্লি এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দেশে পা রেখেই সোজা হায়দরাবাদ হাউজ়ে পৌঁছে যান পুতিন। সেখানে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। একাধিক দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রনেতার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সত্যিই আন্তঃরাষ্ট্রীয় বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এক অনন্য এবং নির্ভরযোগ্য মডেল।”
আজ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে জানিয়েছেন, “কোভিডের কারণে যে প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছে, তারপরেও ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের বিকাশের গতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমাদের বিশেষ এবং দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।” তাঁর মতে, গত কয়েক দশকে, বিশ্ব অনেক মৌলিক পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ উঠে এসেছে, কিন্তু ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব একইরকম রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে উদ্যোগী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরে পুতিন বলেন, “আমরা ভারতকে একটি মহান শক্তি এবং এক বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখি। সময়ে সময়ে ভারত তার বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ছে এবং আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।”
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, “বর্তমানে, দুই দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ প্রায় ৩৮ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়ার দিক থেকে কিছুটা বেশি বিনিয়োগ আসছে। সামরিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে আমরা অন্য কোনও দেশের মতো সহযোগিতা করি। আমরা ভারতে উৎপাদনের পাশাপাশি একইসঙ্গে উচ্চ প্রযুক্তি তৈরি করি।” একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়েও দুই দেশের রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়। পুতিন জানান, “স্বভাবতই, আমরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছু নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই, মাদক পাচার এবং সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধেও লড়াই, সব কিছু নিয়েই আমরা উদ্বিগ্ন। সেদিক দিয়ে আমরা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়েও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।”
উল্লেখ্য, খুব শীঘ্রই ভারতীয় সেনার হাতে আসবে অত্যাধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন একে-২০৩ রাইফেল। সোমবার সকালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথমবারের টু প্লাস টু বৈঠকে এমনই চুক্তিতে সই হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগুর এই সাক্ষাতে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
৫০০০ কোটি টাকার এই চুক্তিতে মোটামুটি ৬ লক্ষ একে-২০৩ রাইফেল তৈরি হবে। উত্তর প্রদেশের আমেঠিতে। একই সঙ্গে এদিনের বৈঠকে আগামী ১০ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ভারত ও রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিলিটারি টেকনোলজির ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক এক চুক্তিপত্রেও সই করেন।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগুর সঙ্গে বৈঠকের পরই রাজনাথ সিং টুইটারে লেখেন, ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ এক বৈঠক হল।’ একে-২০৩ রাইফেল ৭.৬২X৩৯ এমএম ক্যালিবারের সেই রাইফেল যা পুরনো রাইফেলগুলির তুলনায় অনেক বেশি আধুনিক। এই রাইফেলের রেঞ্জ মোটামুটি ৩০০ মিটার। ওজনে খুবই হালকা অথচ অত্যন্ত মজবুত।