লখনউ: গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছিলেন তিনি। উত্তর প্রদেশের মউ কেন্দ্র থেকে পাঁচবার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, পুরোনো অপরাধ তাঁর পিছু ছাড়েনি। ২০০৫ সাল থেকেই উত্তর প্রদেশ এবং পঞ্জাবের জেলে কেটেছে তাঁর। চলে গেলন সেই মুখতার আনসারি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। বর্তমানে উত্তর প্রদেশের বান্দার এক কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। একটি মেডিকেল বুলেটিনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর বমি হয়েছিল। এরপর, রাত ৮.২৫ মিনিট নাগাদ জেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রানী দুর্গাবতী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গিয়েছিল। নয়জন ডাক্তারের একটি দল অবিলম্বে তাঁর চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু, তাঁদের সবরকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, একটু পরেই মুখতার আনসারির হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আনসারিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর, হাসপাতালের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। মুখতার আনসারির মৃত্যুতে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি মাথাচাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই, উত্তর প্রদেশ জুড়ে ফৌজদারি বিধির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের পুলিশের ডিজি প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, বান্দা, মউ, গাজিপুর এবং বারাণসী জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ কর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত চলতি সপ্তাহের শুরুতেই তাঁকে একবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার প্রায় ১৪ ঘণ্টা হাসপাতালে কাটানোর পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়, তাঁর ভাই তথা গাজিপুরের সাংসদ, আফজল আনসারি করেছিলেন, মুখতারকে জেলে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত দুবার জেলে তাঁর খাবারে বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন। বিষক্রিয়াতেই মুখতার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি করেন তাঁর ভাই। কারা বিভাগ অবশ্য জানিয়েছিল, স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায়, মঙ্গলবার ভোরে মুখতার শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিলেন। এরপর, জেলেই চিকিৎসকদের একটি দলকে ডাকা হয়েছিল। তাঁরা মুখতার আনসারিকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করার সুপারিশ করেছিলেন। মাত্র কয়েকদিন পরই তাঁর মৃত্যু হল। তাই, তাঁর মৃত্যুকে ঘিরেও রহস্য তৈরি হয়েছে।
গত কয়েক বছরে, উত্তর প্রদেশে একের পর এক গ্যাংস্টারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। কখনও তারা মারা গিয়েছে পুলিশি এনকাউন্টারে। কখনও বা তাদের জেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের খুন করা হয়েছে। কখনও বা জেলের মধ্যেই হত্যাকরা হয়েছে। মুখতার আনসারির মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্র রাজপুত বলেছেন, “জেলে মুখতার আনসারির মৃত্যু বিজেপির নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশ সরকারের বিষয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত। সবার জানে উচিত তলায় তলায় কি চলছে।”
প্রসঙ্গত, মুখতার আনসারির বিরুদ্ধে ৬১টি ফৌজদারি মামলা ছিল। খুনের অভিযোগই ছিল ১৫টি। অপরাধ জগতে তিনি প্রবেশ করেছিলেন গত শতাব্দীর আটের দশকে। পরে নিজের আলাদা গ্যাং তৈরি করেছিলেন। মউ, গাজিপুর, বারাণসী এবং জৌনপুর এলাকা জুড়ে তোলাবাজি, অপহরণ, খুনের মতো বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ছিল এই গ্যাং। পরে অবশ্য সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়ে বিধায়ক হন। ২০০৪ সালে, তাঁর এক গোপন আস্তানা থেকে একটি মেশিনগান পাওয়া গিয়েছিল। সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনে অভিযুক্ত হয়ে তিনি কারাবন্দি হন। ২০২৩-এর এপ্রিলে, ফের একবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল তাঁর নাম। বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণানন্দ রাইকে হত্যার অপরাধে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ তাঁকে জাল বন্দুক লাইসেন্সের এক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।