নয়া দিল্লি: শেষ পর্যন্ত দল ছাড়লেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। শুক্রবার (২৬ অগস্ট), প্রাথমিক সদস্যপদ-সহ দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। দলের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর কাছে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি দলের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে ধরেছেন এই কাশ্মীরি নেতা। তিনি আরও লিখেছেন, বর্তমানে কংগ্রেস পার্টির পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেখান থেকে আর ফিরে আসার কোনও অবকাশ নেই। ইস্তফাপত্রে তিনি প্রাক্তন কং সভাপতি রাহুল গান্ধীকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। রাহুলের “স্পষ্ট অপরিপক্কতা” এবং তাঁর পার্টিতে “আলোচনার ব্যবস্থা ধ্বংস করার” জন্যই দলের আজ এই অবস্থা বলে অভিযোগ করেছন আজ়াদ। প্রসঙ্গত, মাত্র কয়েকদিন আগেই তিনি স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে জম্মু ও কাশ্মীরের সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
পাঁচ পাতার চিঠিতে আজ়াদ লিখেছেন, “সম্পূর্ণ সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। দেশের কোথাও সংগঠনের কোনো স্তরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২৪ আকবর রোডে এআইসিসি চালাচ্ছে যে উপদল, তাদের তৈরি তালিকায় স্বাক্ষর করতে এআইসিসির বাছাই করা লেফটেন্যান্টদেরকে বাধ্য করা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, গুলাম নবি আজ়াদ ছিলেন কংগ্রেসের বিদ্রোহী জি-২৩ গোষ্ঠীর সবথেকে পরিচিত মুখ। এই গোষ্ঠীর ২৩ জন নেতা ২০২০ সালে সনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়ে ‘সম্পূর্ণ সাংগঠনিক সংশোধন’ এবং একটি ‘পূর্ণ-সময়ের এবং দৃশ্যমান’ নেতৃত্বের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ব্লক স্তর থেকে এআইসিসি পর্যন্ত নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই নির্বাচন আজও করা হয়নি।
“It is therefore with great regret and an extremely leaden heart that I have decided to sever my half a century old assocation with Indian National Congress,” read Ghulam Nabi Azad’s resignation letter to Congress interim president Sonia Gandhi pic.twitter.com/X49Epvo1TP
— ANI (@ANI) August 26, 2022
অদ্ভূতভাবে ইস্তফাপত্রে, গুলাম নবি আজ়াদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর প্রশংসাই করেছেন। তবে, দলের বর্তমান অবস্থার জন্য তিনি সরাসরি তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধীকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে রাহুলের হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়াটাই ছিল কংগ্রেস দলের জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’। সেই সময় থেকেই দলকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আজ়াদ লিখেছেন, “দুর্ভাগ্যবশত, রাহুল গান্ধীর রাজনীতিতে প্রবেশের পরে এবং বিশেষ করে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আপনি (সনিয়া গান্ধী) তাঁকে দলের সহ-সভাপতি নিযুক্ত করার পর, তিনি (রাহুল গান্ধী) বিদ্যমান আলোচনামূলক ব্যবস্থাটি ভেঙে দেন।”
আজ়াদের অভিযোগ, রাহুল আসার পরই দলের সমস্ত প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার বদলে ‘অনভিজ্ঞ স্তাবকদের নতুন গোষ্ঠী’ দলের কাজ পরিচালনা করা শুরু করেছিল। আজ়াদ লিখেছেন, “তাঁর অপরিপক্কতার সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণগুলির মধ্যে অন্যতম হল মিডিয়ার সামনে রাহুল গান্ধীর সরকারী অর্ডন্যান্স ছিঁড়ে ফেলা। অর্ডন্যান্সটি কংগ্রেসের কোর গ্রুপে পাশ করানো হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিও অনুমোদন দিয়েছিলেন। এই শিশুসুলভ আচরণটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কর্তৃত্বকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এমনিতেই ডানপন্থী শক্তি এবং কিছু নীতিহীন কর্পোরেট স্বার্থের সম্মিলিত অপবাদ এবং ভুয়ো প্রচারের নিশানার পর্যায়ে ছিল ইউপিএ সরকার। কিন্তু, অন্য যেকোনও কিছুর থেকে এই একটি একক পদক্ষেপই ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের পরাজয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছিল।”
এখানেই শেষ নয়, আজ়াদ উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সাল থেকে সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর তত্ত্বাবধানে কংগ্রেস দুটি লোকসভা নির্বাচনে অপমানজনকভাবে হেরেছে। ২০১৪ থেকে ২০২২-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত ৪৯টি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে এটি ৩৯টিতে হেরেছে। মাত্র চারটি রাজ্য নির্বাচনে জিতেছে এবং বাকি ছয়টিতে শাসক জোটের অত্যন্ত প্রান্তিক অংশীদার হয়ে রয়েছে। আজ, কমতে কমতে কংগ্রেস শাসিত রজ্যের সংখ্যা মাত্র দুটি। আজ়াদের মতে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে দলের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তিনি বলেছেন দলের বিশিষ্ট নেতাদের অপমান করার পর হুট করে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল। তারপর থেকে গত তিন বছর অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সনিয়া। এই মডেলটিও রাহুল গান্ধীর ‘রিমোট কন্ট্রোল মডেল’এর থেকে ভাল বলে মত দিয়েছেন প্রবীন কং নেতা। তাঁর মতে সেই মডেল ইউপিএ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক অখণ্ডতাকে ভেঙে দিয়েছিল, সেই মডেলই এখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে প্রয়োগ করা হয়েছে। রাহুল গান্ধী এমনকি তাঁর তার নিরাপত্তারক্ষী বা ব্যক্তিগত সহকারীরা সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।