নয়া দিল্লি: ইস্তফাপত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন আগেই, এবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজ়াদ। নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপিকে রাহুল গান্ধী যে ভঙ্গিতে আক্রমণ করেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আজ়াদ। এদিন এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজ়াদ বলেন, “কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির আজ আর কোনও অর্থ নেই।”
জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির কোনও অর্থ নেই। সনিয়া গান্ধীর অধীনে একটাই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি ছিল। কিন্তু বিগত ১০ বছরে ২৫ জন কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং ৫০ জন বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য় হয়েছে।”
রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীনেই কংগ্রেসে বিপর্যয় নেমেছে, এই দাবি করে গুলাম নবি আজ়াদ আরও বলেন, “ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী ও সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীনে কংগ্রেস গঠনমূলক আলোচনার রাজনীতিতেই বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীনে তা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।”
দল ছাড়লেও প্রাক্তন নেত্রী সনিয়া গান্ধীর সম্পর্কে প্রংশসা করে বলেন, “সত্যি কথা বলতে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল অবধি সনিয়া গান্ধী শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতেন। শীর্ষ নেতারা যা পরামর্শ দিতেন, তা গ্রহণ করতেন। উনি আমায় আটটি রাজ্যের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তারমধ্যে সাতটি রাজ্যেই আমি জয়ী হয়েছিলাম। উনি আমার কাজে কখনও হস্তক্ষেপ করেননি। কিন্তু রাহুল গান্ধী আসার পরে, ২০০৪ সাল থেকে তিনি রাহুল গান্ধীর উপরই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ওনার (রাহুল গান্ধী) দল সামলানোর যোগ্যতাই নেই। কিন্তু উনি (সনিয়া গান্ধী) চান যে সকলে রাহুল গান্ধীর সঙ্গেই যেন সকল বিষয়ে কথা বলেন।”
কংগ্রেসের অন্যতম পুরাতন কর্মী ছিলেন গুলাম নবি আজ়াদ। দল ছাড়ার কারণ হিসাবে রাহুল গান্ধীর বাৎসল্যসুলভ আচরণকেই দায়ী করেছেন। পাঁচ পাতার ইস্তফাপত্রেও তিনি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হারের জন্য রাহুল গান্ধীকেই দায়ী করেছিলেন।
এদিন, একাধিক পুরনো কাহিনি তুলে ধরেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের পতনের অন্যতম একটি বড় কারণ ছিল রাহুল গান্ধীর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করতেই রাহুল এই স্লোগান দিলেও, কোনও প্রবীণ নেতাই এই স্লোগান বা কর্মসূচিকে সমর্থন করেননি। বৈঠকে রাহুল গান্ধী যখন জানতে চেয়েছিলেন কারা সমর্থন করছেন এই স্লোগানকে, তখন একাধিক প্রবীণ নেতাই এই স্লোগানের বিরোধিতা করেছিলেন। মনমোহন সিং, একে অ্যান্টনি, পি চিদাম্বরম ও আমি ছিলাম সেই সময়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নিজেদের রাজনৈতিক শিক্ষা ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে পেয়েছি। আমি যখন প্রতিমন্ত্রী ছিলাম, তখন উনি আমায় ও এমএল ফোটেদারকে ডেকে বলেছিলেন যে আমরা যেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করি। আমাদের শিক্ষা ছিল প্রবীণদের ও বিরোধী নেতাদের সম্মান করা। আমাদের কি বিরোধী নেতাদের আক্রমণ করতে বলা হয়নি? ব্যক্তিগতভাবে এইরকম আক্রমণ কি করা যায়?”