নয়া দিল্লি : সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হল আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের মতো। একবার মাটি স্পর্শ করলেই আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জাকিয়া জাফরির মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে এমনটাই বলেন আইনজীবী কপিল সিবল। এদিন সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। দেশভাগের সময় কী ভাবে তিনি তাঁর দাদু দিদিমা কে পাকিস্তানের মাটিতে হারিয়েছিলেন সে কথাও মনে করেন এ দিন।
গোধরা দাঙ্গা কাণ্ডে ক্লিন চিট দেওয়া হয়েছিল গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। সেই সময় মৃত্যু হওয়া কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন। যদিও হাইকোর্ট তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল, তবে পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। আজ শীর্ষ আদালতে ছিল সেই মামলার শুনানি। বিচারপতি এএম খানউইলকর, বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী ও বিচারপতি সিটি রবি কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন চলে সেই মামলার শুনানি। মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিবল। আজ ছিল মামলার শুনানির তৃতীয় দিন। আগামিকাল ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।
সিটের তদন্তে নরেন্দ্র মোদীকে গোধরা কান্ডের ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছিল। সেই সংক্রান্ত তথ্য এ দিন পেশ করার পর কপিল সিবল বলেন, ‘আমার চিন্তা হয় ভবিষ্যতের জন্য। সাম্প্রদায়িক হিংসা হল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মত। একবার মাটি স্পর্শ করলেই জ্বলে ওঠে আগুন, জন্ম হয় আগামী প্রতিবাদের।’ এ কথা বলতে বলতে এ দিন চোখে জল চলে আসে আইনজীবী কপিল সিবলের। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দাদু দিদিমা কে পাকিস্তানের হারিয়েছিলাম, আমিও এই পরিস্থিতির শিকার।’ পরে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে এর জন্য দোষারোপ করছি না। গোটা বিশ্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছে যাওয়া উচিৎ।’
কপিল সিবল আরও বলেন, ‘বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি, কারও বয়ান রেকর্ড করেনি, কারও ফোন বাজেয়াপ্ত করেনি কিংবা কোনও স্থান পরিদর্শনেও যায়নি।’ এমনকি তেহেলকা ম্যাগাজিনের অন্তর্তদন্তের কথা উল্লেখ করে কাপিল সিবল এদিন বলেন, ‘অনেকেই সেখানে ওই হিংসায় অংশগ্রহণ করার কথা স্বীকার করেছিল, তাতেও কোনও গুরুত্ব দেয়নি সিট।’ আদতে সিট কোনও তদন্ত করেনি বলেই অভিযোগ করেন তিনি।
গোধরা কাণ্ডের সময়কার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, গোধরায় কার্ফু জারি করা হয়েছিল। কিন্তু আমেদাবাদে করা হয়নি। ঘটনার পরের দিন সকালেই জড় হয়েছিল বহু মানুষ। সেই সময় পুলিশ কেন কার্ফু জারি করল না, সেই প্রশ্ন এ দিন তুলেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে গুজরাটের এক নিম্ন আদালত স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের মোদীকে ক্লিন চিট দেওয়ার রিপোর্টকেই মান্যতা দিয়েছিল। সেই রায়ই বহাল রাখে গুজরাট হাইকোর্ট। ২০০২ সালের দাঙ্গা নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল শুধু নরেন্দ্র মোদীকেই নয়, ক্লিন চিট দিয়েছিল আরও ঘটনায় অভিযুক্ত আরও ৫৮ জনকে। তাদের রিপোর্টে সিট বলেছিল, এদের কারও বিরুদ্ধেই তেমন কোনও প্রমাণ নেই। পরে গুজরাট হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী।
আরও পড়ুন : জমেছে ২৫-৩০ হাজার অভিযোগের পাহাড়, ফের আটকে গেল উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ