নয়া দিল্লি: দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম, এদিকে অতিরিক্ত লাভের আশায় বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে সেই খাদ্যশস্য। বাজারে জোগানের সঙ্কট ও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর মূল্য়বৃদ্ধি রুখতেই কড়া পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত মাসেই গমের রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রাশ টানা হয়েছে চিনির রফতানিতেও। এ বার একই নিয়ম চালু করা হতে পারে চালের ক্ষেত্রেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে চালের চাহিদার জোগান দিতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপাতত চালের রফতানির উপরে আংশিক বা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। ভারত যদি চালের রফতানিতে রাশ টানে, তবে গোটা বিশ্বে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে, কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ভাত দৈনিক খাবারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরই বিশ্বজুড়ে হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা অনুরোধ করেন, ভারত যেন গম রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। ভারতের উপরে ১৩৫ কোটি জনগণের মুখে খাবার তোলার গুরুদায়িত্ব থাকলেও, এর দেখাদেখি অন্যান্য দেশও যদি খাদ্যশস্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তবে বৈশ্বিক রফতানি পরিকাঠামো জোর ধাক্কা খাবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
গমের পর চিনির উপরেও রফতানিতে রাশ টেনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রের তরফে চলতি মরশুমে চিনির রফতানির সীমা ১ কোটি টনে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ বার চালের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সরকার। ভারত বিশ্বের এক নম্বর চাল রফতানিকারক। তবে চলতি বছরে তাপপ্রবাহের জেরে গম ও ভুট্টার উৎপাদনে যে চরম ক্ষতি হয়েছে, তার জেরে খাদ্য সঙ্কট ও মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের বাজারে যাতে চালের চাহিদা পূরণ করা যায়, তার জন্যই রফতানি বন্ধ বা কাটছাঁটের পথে হাঁটতে পারে কেন্দ্র।
এই প্রসঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ রাধিকা পিপলানি বলেন, “সরকার ইতিমধ্যেই গমের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আগামিদিনে চালের রফতানির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। চিনির রফতানিতে যে সীমারেখা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার জেরে দেশের বাজারে কতদিনে এবং কতটা চিনির দাম কমে, তা এখন দেখার।”
কেন্দ্রের তরফে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, সূত্রের খবর, বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে এবং দামও প্রায় নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তবে ভারতীয়দের খাদ্যাভাসে গম ও চাল একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে বলে গমের পাশাপাশি চালেরও পর্যাপ্ত জোগানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের তরফে রেশনে গম ও চাল- দুটিই দেওয়া হয়। তবে চলতি বছরে গমের ফলন কম হওয়ায় রাজ্যগুলি গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম গম বা আটা কিনবে বলে মনে করা হচ্ছে। গমের পরিপূরক হিসাবেই কেন্দ্রের তরফে চাল বিতরণ করা হতে পারে রেশনের মাধ্যমে। এর জন্য ভাঁড়ারে যাতে পর্যাপ্ত চাল মজুত থাকে, তাও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সেই কারণেই চালের রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিয়োগ করা একটি কমিটি বর্তমানে প্রত্যেকটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য যাচাই করছে। যে পণ্যেরই মূল্য সাধারণের সাধ্যের বাইরে বলে মনে করা হবে, সেই পণ্যেরই দাম কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।
এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে গোটা বিশ্বেই গম ও ভুট্টার দাম আকাশছোঁয়া। চালের দাম ও জোগান এখনও ব্যাহত না হওয়ায় বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট দেখা যায়নি। তবে ভারত যদি চালের রফতানি বন্ধ বা সীমিত করে দেয়, তবে গোটা বিশ্বেই খাদ্য জোগানে চরম সঙ্কট দেখা দিতে পারে।