ঋষিকেশ: চলতি বছরের শুরুতে উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠে একের পর এক বাড়ির দেওয়ালে চিড় ধরতে দেখা গিয়েছিল। দলে দলে মানুষ নিজ নিজ ভিটেবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গিয়েছিল, ধীরে ধীরে মাটি বসে যাচ্ছে যোশী মঠের। এবার প্রায় একই রকমের উদ্বেগ তৈরি হল ঋষিকেশের আপার গঙ্গানগর এলাকায়। গত সপ্তাহান্তের ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পর, এই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ির মেঝে ফেটে ভূগর্ভস্থ জল উঠে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। শুধু আপার গঙ্গানগর এলাকাতেই নয়, একই রকমের অভিযোগ করেছেন দেরাদুনের ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাইওয়ালা এলাকার বাসিন্দারাও।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপার গঙ্গানগর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার আচমকাই তাঁদের বাড়ির মেঝেতে ফাটল ধরে। সেই ফাটল থেকে জল উঠে আসতে থাকে। সেই জল বৃষ্টির জল বা বন্যার জলের মতো নোংরা নয়, একেবারে স্বচ্ছ পরিষ্কার জল। ভূগর্ভ থেকেই এই জল উঠে আসছে বলে সন্দেহ করছেন তাঁরা। এর জেরে তাদের বাড়ির ভিত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। আপার গঙ্গানগর এবং রাইওয়ালা – দুটি এলাকই গঙ্গার তীরবর্তী। কাজেই এমনিতেই এই এলাকাগুলিতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর উঁচু থাকে। গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে সেই জলস্তর আরও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাই সেই জল বাড়ির মেঝে ফেটে উঠে আসছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত নগরায়নকেই দায়ী করছেন। উত্তরাখণ্ডের মধ্য দিয়ে দুটি বড় নদী গিয়েছে – গঙ্গা এবং যমুনা। এই দুই নদীর অববাহিকাতেই ধারাবাহিকভাবে নির্মাণ হয় চলেছে। আগে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে, সেই জল এই দুই নদী ও তাদের শাখা এবং জলাভূমিগুলির মধ্য দিয়ে চলে যেত। কিন্তু, অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে, এই অতিরিক্ত জল এখন বের হওয়ার জায়গা পাচ্ছে না। দেরাদুনের পরিবেশবিদ রেনু পালের মতে, জলের স্বাভাবিক পথ অবরোধ করছে যে নির্মাণগুলি, সেগুলি না সরালে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হবে।
ঋষিকেশের মহকুমা শাসক যোগেশ মিশ্র জানিয়েছেন, জমে থাকা জল দূর করতে পুরো মহকুমা এলাকায় ১৬টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরও পাম্প দাবি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত পরিমাণ ক্ষতিপুরণ দেওয়ার পাশাপাশি, তাদের চিকিৎসা সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। জল জমা এবং ভূগর্ভস্থ জল উঠে আসার সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য, পুরো এলাকার বৈজ্ঞানিক সমীক্ষাও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা জানার চেষ্টা করা হবে।