চেন্নাই: গোটা মাস জুড়েই একের পর এক নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ভাসছে গোটা তামিলনাডু (Tamil Nadu)। এখনও মিলছে না মুক্তি, আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে আগামী দুই দিনও রাজ্যজুড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (Heavy Rainfall) সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, লাগাতার বৃষ্টিতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রাজ্যবাসীর জীবন।
চেন্নাই (Chennai) সহ তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে একটানা ভারী বৃ্ষ্টির জেরে কার্যত বন্য়া (Flood) পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরেই রেকর্ডভাঙা বৃষ্টি হয়েছে তামিলনাড়ুতে। এর আগে ২০১৫ সালে সর্বাধিক বৃষ্টির রেকর্ড থাকলেও আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টি পড়লে সেই রেকর্ডও ভেঙে যাবে।
এদিকে, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন করে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি এবং তার জেরে গোটা এলাকা জলমগ্ন (Water Logging) হয়ে পড়ায় বিরক্ত বাসিন্দারা। মাদিপাক্কামের এক বাসিন্দা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বলেন, “প্রতি বছরের চিত্র এটা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকায় জল জমে যায়। বর্তমানে প্রয় গোটা মাস ধরেই বৃষ্টি চলছে, ফলে জল কমার কোনও সম্ভাবনাই নেই। প্রশাসনকে এই বিষয়ে জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি।”
একটানা বৃষ্টির জেরে প্লাবিত হয়েছে রাজ্য়ের জলাধারগুলিও। চেন্নাই থেকে ত্রিচি সংযোগকারী একটি রাস্তা শনিবারই বন্ধ করে দেওয়া হয় পাঁচটি জলাধার থেকে জল উপচে বেরিয়ে এসে হাইওয়ে প্লাবিত করার জন্য। চেঙ্গালপাট্টু জেলার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ রাস্তা বন্ধ থাকার পর দু-একটি রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের জলাধারগুলি পরপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে জল উপচে বের হচ্ছে। ফলে আশেপাশের গ্রামগুলি প্লাবিত হচ্ছে। প্রায় ৫০০-রও বেশি পরিবার প্রভাবিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলাশাসককেও খবর দেওয়া হয়েছে এবং তিনি দ্রুত উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করছেন বলে জানিয়েছেন।
রাজ্যের নীচু জায়গাগুলি প্রায় সম্পূর্ণই জলে নিমজ্জিত হয়েছে। সেখানে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। প্রশাসনের তরফে এখনও অবধি প্রায় তিন হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জল জমে থাকায় বাড়িতে সাপ ঢুকে যাওয়ায় নতুন সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, লাগাতার বৃষ্টির জেরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলেও। জমিতেই প্রায় অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেটুকু ফসল মজুত করা ছিল, তাও নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভিন রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটানা বৃষ্টিতে সবজির বাজার অগ্নিমূল্য হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বন্য়াদুর্গত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও। তিনি টুইট করে লিখেছেন, “পুরসভা, বিদ্য়ুৎ, পুলিশ সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকদের ধন্যবাদ জানালেও কম হবে, তারা এই লাগাতার বৃষ্টির মধ্যে যেভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, তা সত্যি প্রশংসনীয়। তাদের তৎপরতাতেই একদিকে যেমন বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে, তেমনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে। আমি আপনাদের পাশে রয়েছি এবং আগামিদিনেও আপনাদের পাশে থাকব।”
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নিম্নচাপ কিছুটা দুর্বল হলেও আগামী দুই দিন রাজ্য়জুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: Karnataka COVID Norms: ওমিক্রন রুখতে তৎপর কর্নাটক সরকার, দেশ-বিদেশের যাত্রীদের মানতে হবে একাধিক নিয়ম