রাঁচি: মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর), নতুন সংসদ ভবনে প্রথম অধিবেশনে ভারতের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে চন্দ্রযান-৩-এর সফল অভিযানের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইসরোর চাঁদ ছোঁয়ার সাফল্য গোটা দেশের গর্ব। অথচ, ইসরোর এই চন্দ্রযান-৩-এর উৎক্ষেপণের জন্য লঞ্চপ্যাড তৈরি করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের এখন সংসার চালাতে রাস্তায় ইডলির দোকান দিতে হচ্ছে! চন্দ্রযান-৩-এর লঞ্চপ্যাড এবং তার স্লাইডিং দরজা তৈরি করেছিল ভারত সরকারের আওতাধীন সংস্থা হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড বা এইচইসি। বিবিসি-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৮ মাস ধরে বেতন পাননি এই সংস্থার কর্মীরা। শেষে বাধ্য হয়ে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে রাস্তার ধারে একটি ইডলির দোকান দিয়েছেন সংস্থার এক প্রযুক্তিবিদ।
বিবিসি জানিয়েছে, ওই প্রযুক্তিবিদের নাম দীপক কুমার উপরারিয়া। এইইসির এই কর্মী বর্তমানে রাঁচির ধুরওয়া এলাকায় পুরনো বিধানসভা ভবনের উল্টোদিকে একটি ইডলির দোকান দিয়েছেন। এখন, একইসঙ্গে তিনি এই দোকান এবং অফিসের কাজ সামলাচ্ছেন। প্রযুক্তিবিদ সকালে ইডলি বিক্রি করেন, তারপর অফিসে যান। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাড়ি ফেরার আগে, ফের ইডলি বিক্রি করেন। সংসার খরচ মেটাতে এছাড়া তাঁর আর কোনও উপায় নেই।
দীপক কুমার উপরারিয়া জানিয়েছেন, বেতন বন্ধ হওয়ার পর, প্রথমে তিনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সংসারর খরচ চালাচ্ছিলেন। ব্যাঙ্ক থকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ঋণের অর্থ শোধ করতে পারেননি তিনি। এরপর, তিনি আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। সব মিলিয়ে বাজারে তাঁর চার লক্ষ টাকার ঋণ হয়ে গিয়েছে। কাউকেই টাকা ফেরত দিতে না পারায়, এখন কেউ আর তাঁকে ধারও দিতে চাইছেন না। তারপর, স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন। শেষে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, তাঁর পরিবারের সামনে অনাহারের ঝুঁকি তৈরি হয়। সেই সময়ই তিনি ইডলির দোকান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, “আমার স্ত্রী ভাল ইডলি বানায়। সেগুলো বিক্রি করে আমি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন করি। লাভ থাকে ৫০ থেকে ১০০ টাকার। এভাবেই আমি আমার সংসার চালাচ্ছি।”
2800 employees of Heavy Engineering Corporation Ltd (HEC) which worked on the construction of the launchpad, are protesting as they have not been paid for 18 months. pic.twitter.com/7bgL4zIetn
— Cow Momma (@Cow__Momma) September 17, 2023
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীপক উপরারিয়া মধ্য প্রদেশের হারদা জেলার বাসিন্দা। ২০১২ সালে, তিনি এক বেসরকারি সংস্থার চাকরি ছেড়ে দিয়ে ৮,০০০ টাকা বেতনে এইচইসি-তে যোগ দিয়েছিলেন। সরকারি সংস্থা হওয়ায় তিনি নিশ্চিন্ত জীবনের আশা করেছিলেন। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তাঁর দুই মেয়ে আছে। বেতন না পাওয়ায় তাঁদের স্কুলের বেতনও দিতে পারেননি এইচইসি-র এই কর্মী। স্কুল থেকে প্রায় প্রতিদিন নোটিশ পাঠানো হয়। এই নিয়ে স্কুলে তাঁর মেয়েদের অপমানও করা হয় বলে জানিয়েছেন দীপক।
অবশ্য, শুধু তাঁর মেয়েদের নয়, স্কুলে এইচইসিতে কর্মরত অভিভাবকদের সন্তানদের আলাদা করে চিহ্নিত করা হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। আসলে বেতন না পাওয়ার তালিকায় তিনি তো একা নন। বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইচইসির প্রায় ২,৮০০ কর্মচারী গত ১৮ মাস ধরে বেতন পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। এই বিষয়ে রাঁচিতে এইচইসি-র কর্মীরা প্রতিবাদও জানিয়েছেন।