দেরাদুন: উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় পেশ হল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি), বিজেপি বিধায়কদের ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানের মধ্যে এই বিল পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। আর তারপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে দাবি উঠছে, গোটা দেশেই এই ধরনের আইন চালুর। বস্তুত, ভারতের সংবিধানেও বিবাহ-সম্পত্তির অধিকারের মতো ব্যক্তিগত বিষয়ে সকল ধর্ম নির্বিশেষে অভিন্ন আইন চালুর চেষ্টা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে, দেশে এই আইন চালুর পক্ষে মত ব্যক্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বিধানয়ভায় বিলটি পাশ হলে, দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ডে এই আইন চালু হবে। ভবিষ্যতে দেশব্যাপী এই আইন চালু করার ক্ষেত্রে, উত্তরাখণ্ডের এই বিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কী আছে এই বিলে? আসুন দেখে নেওয়া যাক –
২০২২ সালে উত্তরাখণ্ড বিধানসভা ভোটের আগে এই বিধি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। বর্তমানে বিবাহ-সম্পত্তির অধিকারের মতো ব্যক্তিগত বিষয়ের বিরোধ নিষ্পরত্তির জন্য, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন আইন রয়েছে। সেগুলি বাতিল করে সকল ধর্ম নির্বিশেষে একটি অভিন্ন ব্যক্তিগত আইন তৈরির কথা বলেছিলেন পুষ্কর সিং দামি। ক্ষমতায় ফেরার পর, ওই বছরেরই ২৭ মে, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিষয়ে এক বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল ধামি সরকার। সম্প্রতি কমিটি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তা ছিল ৭৪৯ পৃষ্ঠার। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮২ পৃষ্ঠার এই খসড়া বিল তৈরি করা হয়েছে। বিলটি চার মূল বিষয়ে বিভক্ত – বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, লিভ ইন সম্পর্ক এবং এগুলির সম্পর্কিত বিষয়।
বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব
– সকল ধর্মের জন্য বহুবিবাহ এবং বাল্যবিবাহের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা
– সকল ধর্মের মেয়েদের জন্য একটিই নির্দিষ্ট বিবাহযোগ্য বয়স
– সকল ধর্মের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের একটিই অভিন্ন ভিত্তি ও প্রক্রিয়া
উত্তরাধিকার
– সকল ধর্মের পুত্র ও কন্যার সমান অধিকার
– বৈধ ও অবৈধ সন্তানের সমান অধিকার
– দত্তক নেওয়া এবং জৈবিকভাবে জন্ম নেওয়া সন্তানদের সমান অধিকার
– কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির উরর স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের সমান অধিকার
লিভ-ইন সম্পর্ক
– লিভ-ইন সম্পর্ক আইনগতভাবে নিবন্ধিত করা বাধ্যতামূলক করা, অন্যথায় ৬ মাস পর্যন্ত জেল
– ২১ বছরের কম বয়সীদের লিভ ইনের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সম্মতি লাগবে
– কোনও সঙ্গী বিবাহিত হলে বা অন্য সম্পর্কে জড়িত থাকলে, নাবালক বা নাবালিকা হলে এবং জোর করে বা প্রতারণা করে সম্মতি আদায় করা হলে অথবা ভুল পরিচয় দিলে, লিভ-ইন সম্পর্ক নিবন্ধিত হবে না
সম্পর্কিত বিষয়
– বিবাহের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা
– বিবাহ নিবন্ধন না করলে সরকারি সুবিধা না দেওয়া
– মেয়েদের বিবাহের বয়স বৃদ্ধি, যাতে তারা বিয়ের আগে শিক্ষা অর্জনের পর্যাপ্ত সময় ও সুবিধা পায়
– বিবাহবিচ্ছেদ বা স্বামীর মৃত্যুর পর মুসলিম মহিলাদের যে হালাল এবং ইদ্দত করেন, তা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা
– মুসলিম মহিলারা-সহ সকল মহিলাকে দত্তক গ্রহণের অধিকার প্রদান করা
– জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা