মুম্বই: শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূ বঞ্চনার শিকার! এমন অভিযোগ নতুন নয়। কখনও স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, কখনও শ্বশুর বা শাশুড়ির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। সেরকমই একটি মামলায় গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ বম্বে হাইকোর্টের। যে বাড়িতে বছরের পর বছর থেকে সংসার সামলাচ্ছেন গৃহবধূ, সেই বাড়ি থেকে এক লহমায় তাঁকে বের করে দেওয়া যায় না। এমনটাই বলল আদালত। সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট অনুযায়ী, গৃহবধূকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি সন্দীপ মার্নের বক্তব্য সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট আর বধূ নির্যাতন বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্টের মধ্যে যদি সংঘাত তৈরি হয়, তাহলে তার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার প্রয়োজন পড়ে।
এক গৃহবধূর করা মামলার শুনানি চলছিল বম্বে হাইকোর্টে। মেনটেনেন্স ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ ছিল তাঁকে ও তাঁর সন্তানকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। জানা গিয়েছে, ওই পরিবারে ওই গৃহবধূ ২৭ বছর ধরে থাকতেন। তাঁর অভিযোগ, পরিবারের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাঁর স্বামী তাঁকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
২০২২ সালে গৃহবধূ তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তারপর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এরপর ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেয়, গৃহবধূকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে। এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা।
এদিকে, শ্বশুর-শাশুড়ি আদালতে দাবি করেন, তাঁদের এই সমস্যার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়েছে বলেও জানান তাঁরা। তবে হাইকোর্ট এই মামলা শুনে পর্যবেক্ষণ দেয়, ট্রাইব্যুনাল দুই আইনের সংঘাত চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র বয়স্ক মানুষদের শান্তির কথা ভেবে একজন গৃহবধূকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না, বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে না। গৃহবধূর স্বামীও এ ক্ষেত্রে তাঁর কোনও থাকার ব্যবস্থা করে দেননি। তাই আদালতের নির্দেশ, যে ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে বধূ নির্যাতনের মামলা হয়েছে, তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট ব্যবহার করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি।
বিচারপতি আরও বলেন, বয়স্ক মানুষেরা শেষ জীবনটা শান্তিতে কাটাতে চাইতেই পারেন, এতে কোনও ভুল নেই। তবে এ ক্ষেত্রে গৃহবধূকেও তাঁর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আদালত আরও উল্লেখ করেছে, গৃহবধূ যদি শ্বশুরবাড়িতে নাও থাকতেন, সে ক্ষেত্রেও অধিকার দাবি করতে পারতেন তিনি।