নয়া দিল্লি: ভারতে ৫জি (5G) মোবাইল পরিষেবা চালু করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেই ২০১৭ সালে। প্রায় পাঁচ বছর পর, শনিবার (১ অক্টোবর), অবশেষে নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসের ষষ্ঠ উদ্বোধন করার সময় নির্বাচিত শহরে ৫জি পরিষেবা চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন এই পরিষেবা চাল করতে ৫ বছর লাগল? কোন কোন সংস্থা এই পরিষেবা দিচ্ছে, কোথায় কোথায়? এই পরিষেবার সুবিধাগুলিই বা কী কী? আসুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক, ভারতে ৫জি পরিষেবা সম্পর্কে সবকিছু –
গত ৫ বছরের যাত্রা –
২০১৭ সালে, মোদী সরকার দেশে ৫জি পরিষেবা চালুর রোডম্যাপ তৈরির জন্য শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, সরকার এবং পরিষেবা নিয়ন্ত্রকদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ-স্তরের ফোরাম গঠন করেছিল। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এজে পলরাজ ছিলেন এই ফোরামের প্রধান। ২০১৮ সালে এই ফোরাম তার রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে স্পেকট্রাম নীতি, নিয়ন্ত্রক নীতি, প্রয়োগ এবং ব্যবহারের গবেষণাগারের মতো ক্ষেত্রগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপর, সরকার ৫জি পরিষেবা বিষয়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য টেলিকম অপারেটরদের স্পেকট্রাম বরাদ্দ করা শুরু করেছিল। পরের বছর টেলিকম বিভাগ এবং ট্রাই স্পেকট্রাম মূল্য নির্ধারণ করা শুরু করে। চলতি বছরের অগস্টে, সরকার ৫জি স্পেকট্রাম নিলাম পরিচালনা করে।
কোন কোন শহরে ৫জি পরিষেবা চালু হচ্ছে?
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ধাপে ধাপে ভারতে ৫জি পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে এদিন থেকে ৫জি পরিষেবা মিলবে ১৩টি শহরে – আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগঢ়, চেন্নাই, দিল্লি, গান্ধীনগর, গুরুগ্রাম, হায়দ্দরাবাদ, জামনগর, কলকাতা, লখনউ, মুম্বই এবং পুনে। রিলায়েন্স জিও সংস্থা গত অগস্টেই জানিয়েছিল, চলতি বছরের দীপাবলির মধ্যেই মুম্বই, চেন্নাই ও কলকাতার মতো মেট্রো শহরগুলিতে তারা ৫জি নেটওয়ার্ক চালু করবে। অন্যদিকে, ভারতী এয়ারটেল বলেছে, ২০২৩ সালের শেষের মধ্যেই দেশের সমস্ত শহুরাঞ্চলে তাদের ৫জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা পাওয়া যাবে। আর ২০২৪-এর মার্চের মধ্যে দেশের সব ছোট শহর এবং প্রধান প্রধান গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে যাবে তাদের ৫জি পরিষেবা।
৫জির সুবিধা কী কী?
যোগাযোগ মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, ৫জি পরিষেবা নতুন নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ এবং সামাজিক সুবিধা সৃষ্টি করবে। ভারতীয় সমাজ বদলে দিতে পারে এই নয়া প্রজন্মের মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। ফলে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতি ৪৫,০০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপভোক্তারা ৪জি পরিষেবার তুলনায় অতি দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবা উপভোগ করতে পারবেন। ৪জি পরিষেবার সর্বোচ্চ গতি যেখানে মাত্র ১০০ এমবিপিএস, সেখানে ৫জি-তে ইন্টারনেটের গতি ১০ জিবিপিএস হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইভাবে, লেটেন্সি অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার সময়ও ৪জি-র ১০-১০০ মিলি সেকেন্ডের থেকে ১ মিলি সেকেন্ডের নিচে নেমে আশবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৫জি নেটওয়ার্কের দুই ভিন্ন মোড –
ভারতে দুটি মোডে ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে – ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন’ বা ‘স্বতন্ত্র’ এবং ‘নন-স্ট্যান্ড অ্যা’লোন বা ‘অ-স্বতন্ত্র’। জিও সংস্থা হাঁটছে ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন’ মোডে। ৪জি নেটওয়ার্কের সমান্তরালে পৃথক ৫জি নেটওয়ার্ক তৈরি করছে তারা। এর জন্য ২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে, ভারতী এয়ারটেল বেছে নিয়েছে ‘নন-স্ট্যান্ড অ্যালোন’ বা অ-স্বতন্ত্র মোড। এই মোডে ইতিমধ্যেই বিদ্যমান ৪জি নেটওয়ার্কের পরিকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করেই ৫জি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। ফলে, প্রাথমিক খরচ এবং পরিষেবাগুলি চালুর সময়ও স্বতন্ত্র নেটওয়ার্কের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম লাগে। তবে, এই ধরনের নেটওয়ার্কগুলি আসলে স্বতন্ত্র ৫জি নেটওয়ার্ক তৈরির প্রথম ধাপ বলেই মনে করা হয়। বিশ্বব্যাপী দেখা গিয়েছে, অপারেটররা অ-স্বতন্ত্র ৫জি নেটওয়ার্ক চালু করলেও, পরবর্তীতে স্বতন্ত্র নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। ৪জি স্মার্টফোনের মাধ্যমেও এই নেটওয়ার্কে সংযোগ করা যায়।