কীভাবে মণিপুরে ছড়িয়ে পড়ল হিংসা? লোকসভাকে কী জানালেন অমিত শাহ?

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Aug 09, 2023 | 8:35 PM

চলতি বছরের ৩ মের আগে পর্যন্ত একদিনও সেখানে কার্ফিউ জারি করতে হয়নি। একদিনও বনধ হয়নি, রাস্তা অবরোধ হয়নি এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ডও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, এই পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে প্রতিবেশি দেশ মায়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা।

কীভাবে মণিপুরে ছড়িয়ে পড়ল হিংসা? লোকসভাকে কী জানালেন অমিত শাহ?
লোকসভায় মণিপুর নিয়ে বক্তব্য রাখছেন অমিত শাহ
Image Credit source: PTI

Follow Us

নয়া দিল্লি: অবশেষে সংসদে মণিপুর নিয়ে বিরোদীদের জবাব দেওয়ার সুযোগ পেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবারই ইন্ডিয়া জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এদিন সেই প্রস্তাবের বিপক্ষে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মণিপুরে হিংসার তাণ্ডব চলছে বলে মেনে নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এই হিংসা নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন বিরোধীদের। তিনি বলেন, “মণিপুরে হিংসার তাণ্ডব চলছে। এই বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আমি একমত। মণিপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা লজ্জাজনক। কিন্তু, তা নিয়ে রাজনীতি করা আরও বেশি লজ্জাজনক।” কিন্তু, কীভাবে মণিপুরে এই হিংসা শুরু হল? কী জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?

তিনি জানিয়েছেন, প্রায় সাড়ে ছয় বছর ধরে মণিপুরে সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। চলতি বছরের ৩ মের আগে পর্যন্ত একদিনও সেখানে কার্ফিউ জারি করতে হয়নি। একদিনও বনধ হয়নি, রাস্তা অবরোধ হয়নি এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ডও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, এই পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে প্রতিবেশি দেশ মায়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২১ সালে মায়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটে এবং সামরিক শাসনের সূচনা হয়। সেখানে কুকি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গণতন্ত্রে দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সেই দেশের সামরিক শাসকরা তাদের উপর দমন-পীড়ন শুরু করে। মায়ানমার-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। তাই মায়ানমার থেকে সেনার অত্যাচার থেকে বাঁচতে হাজারে হাজারে দলে কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ মিজোরাম এবং মণিপুরে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে।

ভারতে প্রবেশ করার পর তারা বনাঞ্চলে ঘর তৈরি করা শুরু করে। এর ফলে মণিপুরের বাকি অংশে একটা নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়। তারা আশঙ্কা করে যে রাজ্যের জনসংখ্যা বদলে যাবে। ২০২২ থেকেই এই সমস্যা উপলব্ধি করে কাঁটাতার লাগানোর কাজ শুরু করেছে মোদী সরকার। কিন্তু, জনসংখ্যাগত সমস্যা মণিপুর রাজ্যের বড় সমস্যা। উপত্যকায় মেইতেই সম্প্রদায় থাকেন, পাহাড়ে কুকিরা। দলে দলে কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ, মায়ানমার থেকে ভারতে প্রবেশ করায় মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের মনে শঙ্কা তৈরি হয়, তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে অনুপ্রবেশকারীদের পরিচয়পত্র দেওয়া শুরু করে ভারত সরকার। ভারতের ভোটার এবং আধারের নেগেটিভ তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে, কুকিদের জনসংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, তাতে মেইতেইদের মন থেকে নিরাপত্তাহীনতা দূর হয়নি।

১৯৬৮ সালে মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল দুই পারেই ৪০ কিমি পর্যন্ত যে কেউ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই যেতে পারবে। ফলে কাউকে অনুপ্রবেশ করা থেকে আটকানো যায়নি। ২৯ এপ্রিল একে কেন্দ্র করেই একটি গুজব ছড়িয়েছিল। কুকিদের যে ৫৮টি আশ্রয়শিবির ছিল, সেগুলিকে গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই গুজবকে ঘিরেই ইম্ফল উপত্যকায় বড় অশান্তি শুরু হয়েছিল। মাইকিং করেও সেই গুজব আটকানো যায়নি। এরপর মণিপুর হাইকোর্চের এক রায় এই আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছিল। হাইকোর্টের রায় ছিল, ২৯ মের আগে মেইতেই সম্প্রদায়কে আদিবাসী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এর ফলে পাহাড়ে অশান্তি শুরু হয়। কুকিদের মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। ৩ মে এক মিছিলকে কেন্দ্র করে কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সেই থেকে দাঙ্গা চলছে।

এর পাশাপাশি আরও একটি বিষয় পরিস্থিতি বিগড়ে দেয়। মায়ানমারে সামরিক শাসন শুরু হওয়ার পর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে। মায়ানমারের দিক থেকে মাদক চোরাচালান করা হচ্ছে মণিপুরে। এই নিয়েও অশান্তি রয়েছে। এই থেকেই পরিস্থিতি ক্রমে বেহাল হয়ে পড়েছে।

Next Article