হায়দরাবাদ: সামান্য টাকা বিনিয়োগ করলেই কয়েক বছর বাদেই হাতে পাবেন প্রায় দ্বিগুণ টাকা! এমনটাই টোপ দেওয়া হত গ্রাহকদের। যাঁরাই ভরসা করে টাকা রাখতেন বিনিয়োগ অ্যাপে, দিন কয়েকের মধ্যেই তারা খুইয়ে ফেলতেন বিনিয়োগের সমস্ত টাকা। এমনই এক প্রতারণা চক্রের খোঁজ পেল হায়দরাবাদ পুলিশ। শুধু তেলঙ্গানা নয়, দেশের একাধিক রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতারণা চক্র। ভারতের বাইরে চিন, তাইওয়ান, কম্বোডিয়া ও মধ্য প্রাচ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল এই প্রতারণার জাল। তদন্তে নেমে পুলিশ এখনও অবধি ৯০৩ কোটি টাকার প্রতারণার খোঁজ মিলেছে। একজন চিন ও তাইওয়ানের নাগরিক সহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
করোনাকালে আর্থিক সঙ্কটে যখন ভুগছিল দেশের একটি বড় অংশই। সেই সময়ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল একাধিক প্রতারণার ব্যবসাও। এই প্রতারণা চক্রও সেই সময়েই গড়ে উঠেছিল। অনলাইন বিনিয়োগ অ্য়াপের আড়ালেই চলত প্রতারণা চক্র। বিনিয়োগকারীদের অল্প সময়ে টাকা প্রায় দ্বিগুণ করে দেওয়ার টোপ দিয়েই অ্যাপে টাকা রাখতে বাধ্য করা হত। এরপর সেই টাকা ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে বেআইনিভাবে পাচার করে দেওয়া হত আইনি ফাঁক-ফোকরকে কাজে লাগিয়ে।
হায়দরাবাদের পুলিশ কমিশনার সিভি আনন্দ জানান, দেশের প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। শুধুমাত্র দিল্লিতেই ১০ হাজার কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। মোট প্রতারণার অঙ্ক হাজার কোটি টাকা পার করতে পারে। এখনও অবধি ৯০৩ কোটি টাকার প্রতারণার খোঁজ মিলেছে। পুরো টাকাটাই দেশের বাইরে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত চিনের বাসিন্দা লি জ়োনজুন ও তাইওয়ানের বাসিন্দা চু চু ইউ ২০১৯-২০ সালে ভারতে এসেছিলেন। করোনাকালে তাঁরা নিজেদের দেশে ফিরে যান। পরে সংক্রমণ কিছুটা কমতেই ফের প্রতারণা চক্র চালু করা হয়। চিন ও তাইওয়ানে থাকা তাদের বসদের যাবতীয় তথ্য জানাতেন তাঁরা। গত জুলাই মাসে পুলিশের কাছে প্রথম অভিযোগ দায়ের হয়। এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, লোক্সাম নামক এক বিনিয়োগ অ্যাপে ১.৬ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পরই সেই টাকা উধাও হয়ে যায়। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে শিন্ডাই টেকনোলজিস প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ট্রান্সফার হয়েছে।
শিন্ডাই সংস্থার নামে বিরেন্দর সিং নামক এক ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। পুণে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় ওই ব্যক্তি জানান, জ্যাক নামক চিনের এক বাসিন্দা তাঁকে ওই অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছিলেন। এই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তাঁকে ১.২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বিটেনক নেটওয়ার্ক প্রাইভেট লিমিটেড নামক আরেকটি সংস্থার নামেও একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া অর্থও শিন্ডাই সংস্থার সঙ্গেই যুক্ত। সঞ্জয় কুমার নামক দিল্লির বাসিন্দা ওই অ্যাকাউন্টগুলি খুলেছিলেন। জানা গিয়েছে, মোট ১৫টি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তিনি। প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ১.২ লক্ষ টাকা করে কমিশন পেয়েছিলেন তিনি। অ্যাকাউন্টগুলির যাবতীয় তথ্য তাইওয়ানের বাসিন্দা চু চু ইউ-কে জানাতেন তিনি।
শিন্ডাই টেকনোলজি থেকে মোট ৩৮টি অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হত। সেই টাকা ডলারে পরিবর্তিত করে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হত। হায়দরাবাদ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার পরবর্তী তদন্তের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে।