In Depth on UP Detention Centre: অনুপ্রবেশকারীদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠাবেন যোগী, বাংলাতেও কি তৈরি হবে?
In Depth on Immigrants-Detention Centre: উত্তর প্রদেশে যখন ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা আলাদা। এসআইআর শুরুর আগে থেকেই বিজেপি দাবি করেছিল যে এক কোটি বাংলাদেশি ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ যাবে। এসআইআর শুরু হতেই একদিকে যেখানে নিউটাউন থেকে শুরু করে মধ্যমগ্রাম, ডোমজুড়, কোড়াঝাড় সহ বাংলার একাধিক জায়গায় হঠাৎ বাড়িতে বাড়িতে তালা পড়েছে।

এ যেন খোলা দুয়ার। চাইলেই সীমান্ত পার করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে পড়া যায়। অনুপ্রবেশ মাথাব্যথা অনেকদিনের। তবে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই ছবিটা যেন হঠাৎ বদলে গেল। এখন আবার হিড়িক পড়েছে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার। আর তার মাঝেই বড় ঘোষণা। তৈরি হবে ডিটেনশন সেন্টার (Detention Centre)। সেখানে ধরে ধরে ভরা হবে অনুপ্রবেশকারীদের। তারপর নথিপত্র যাচাই করে, তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে নিজেদের দেশে। নাহ পশ্চিমবঙ্গে নয়, ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করার ঘোষণা করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath)। উত্তর প্রদেশে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হবেই। বাংলাতেও কি দরকার ডিটেনশন সেন্টারের? যোগী সরকারের এই সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গেই বা কী প্রভাব পড়বে?
বরাবরই দাবাং স্টাইলের জন্য পরিচিত মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দুষ্কৃতীদের এনকাউন্টার থেকে শুরু করে বুলডোজার অ্যাকশন- বিতর্ক তাঁকে নিয়ে কম নয়। তবে যা বলেছেন, তাই করেছেন যোগী। এবার তিনি সুর চড়ালেন অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গের মতো উত্তর প্রদেশেও এসআইআর (SIR) চলছে। এসআইআরে অবৈধ বা নকল ভোটারদের নাম বাদ যাবে। তবে শুধু নাম বাদ দিয়েই কিন্তু ক্ষান্ত হচ্ছেন না যোগী আদিত্যনাথ। পণ নিয়েছেন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর। জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজ্যের সম্প্রীতি বজায় রাখতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কী বলেছেন যোগী?
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সাফ বলেছেন, কোনও ধরনের বেআইনি কাজ রাজ্যে বরদাস্ত করা হবে না। রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন যে দ্রুত অনুপ্রবেশকারীদের যেন চিহ্নিত করা হয়। এরপরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে। প্রতি জেলায় তৈরি করা হবে অস্থায়ী ডিটেনশন সেন্টার। এখানেই ঠাঁই হবে অবৈধভাবে দেশের প্রবেশ করা অনুপ্রবেশকারীদের। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীদের প্রথমে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে। তথ্য যাচাইয়ের পর, আইন অনুযায়ী তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
উত্তর প্রদেশের জেলাশাসকরাও জানিয়েছেন, রাজ্যে যদি কোনও অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েন, তাহলে তাদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে। ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ডিটেনশন সেন্টারেই থাকতে হবে।
উত্তর প্রদেশে ডবল ইঞ্জিন সরকার। কেন্দ্রে যে সুর শোনা গিয়েছিল অমিত শাহের মুখে, তাই শোনা গিয়েছে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মুখেও। গত অক্টোবর মাসেই অমিত শাহ বলেছিলেন, ভারতকে ধর্মশালা হতে দেবেন না। আজ হোক বা কাল, অনুপ্রবেশকারীদের তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতেই হবে। অনুপ্রবেশকারীদের থেকে দেশকে মুক্ত করতে তিনি ৩-ডির দাওয়াই দিয়েছিলেন। কী এই ৩-ডি। ডিটেক্ট (Detect) অর্থাৎ চিহ্নিতকরণ, ডিলিট অর্থাৎ ভোটার তালিকা থেকে নাম বাতিল এবং শেষ ডিপোর্টেশন অর্থাৎ দেশ থেকে বিতাড়ন।
উত্তর প্রদেশের মানচিত্র যদি দেখা হয়, তাহলে একমাত্র নেপালের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে। নেপাল থেকে বহু মানুষ ভারতে আসেন উত্তর প্রদেশের পথ ধরে। এমনিতে নেপাল থেকে ভারতে প্রবেশ করার জন্য পাসপোর্ট বা ভিসার দরকার পড়ে না। তবে নথি যাচাই করা হয়। যোগী আদিত্যনাথ যে অনুপ্রবেশকারীর কথা বলছেন, তারা কি শুধু নেপালি? তা কিন্তু নয়। বিহার, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে উত্তর প্রদেশ। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ, বিহার কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করা রাজস্থান থেকে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে উত্তর প্রদেশে পৌঁছতেই পারে অনুপ্রবেশকারীরা। তাদেরই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর কথা বলেছেন যোগী আদিত্যনাথ।
পশ্চিমবঙ্গেও কি ডিটেনশন সেন্টার তৈরি হবে?
উত্তর প্রদেশে যখন ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা আলাদা। এসআইআর শুরুর আগে থেকেই বিজেপি দাবি করেছিল যে এক কোটি বাংলাদেশি ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ যাবে। এসআইআর শুরু হতেই একদিকে যেখানে নিউটাউন থেকে শুরু করে মধ্যমগ্রাম, ডোমজুড়, কোড়াঝাড় সহ বাংলার একাধিক জায়গায় হঠাৎ বাড়িতে বাড়িতে তালা পড়েছে। বাসিন্দারা রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছেন। কোথায় গিয়েছেন তাঁরা? প্রতিবেশীদের দাবি, এরা সবাই বাংলাদেশি, এসআইআর শুরু হতেই ভয়ে পালিয়েছেন।
আবার উত্তর ২৪ পরগণার হাকিমপুর সীমান্তে আরেক ছবি। কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেছেন সেখানে। অপেক্ষা করছেন দিনের পর দিন। রাতের পর রাত। কীসের অপেক্ষা? পুশব্যাকের। বিএসএফ তাদের পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। বোঝাই যাচ্ছে এরা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। কেউ স্বীকার করছেন যে চোরাপথে বা দালালকে টাকা দিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন। এখন এসআইআর শুরু হতেই ফিরে যাচ্ছেন বাংলাদেশে। এখানে টাকা দিয়ে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সব তৈরি করে নিয়েছিলেন। ওখানে গিয়ে কী করবেন, জানেন না কেউ। হাকিমপুর কার্যত অনুপ্রবেশকারীদের হোল্ডিং সেন্টারে পরিণত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০০ মানুষকে পুশব্য়াক করা হয়েছে। আরও শয়ে শয়ে, হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন।
রাজনৈতিক প্রভাব-
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরার হিড়িক নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক তরজা তো চলছেই। তবে যোগী সরকারের সিদ্ধান্ত একটা প্রশ্ন তুলছেই যে বাংলাতেও কি ডিটেনশন সেন্টার তৈরির প্রয়োজন? তাছাড়া উত্তর প্রদেশে ডিটেনশন সেন্টারের খবর পেয়েই অনুপ্রবেশকারীরা যদি এই বাংলায় ঢুকে পড়ে, তাহলে তার দায় নেবে কে?
বিজেপির কাছে অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে যোগী সরকারের এই সিদ্ধান্ত। যোগী মডেল বা ইউপি মডেলের কথা প্রায় সময়ই শুভেন্দু অধিকারী থেকে একাধিক বিজেপি নেতার মুখে শোনা যায়। উত্তর প্রদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের পাততাড়ি গুটিয়ে পালানোর আগেই এই সিদ্ধান্ত, সেখানে বাংলায় তো জ্বলজ্বল করছে অনুপ্রবেশকারী কারা। বঙ্গ বিজেপি-ও এবার ডিটেনশন ক্যাম্পের দাবি করতেই পারে। ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশকারী মুক্ত বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতিতে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে ডিটেনশন ক্যাম্প।
আবার বাংলাদেশি পুশব্যাক করতে গিয়ে দিল্লি, গুজরাট, মধ্য প্রদেশ থেকে একাধিক বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিককেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে জল। এবার উত্তর প্রদেশে ডিটেনশন সেন্টার থেকে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদেরও পুশব্যাক যে করা হবে না, এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। তখন আবার তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বড় অস্ত্র হবে এই ডিটেনশন সেন্টার।
