Assam Accord: কেন তৈরি হয়েছিল ‘অসম অ্যাকর্ড’, নাগরিকত্ব নিয়ে কোথায় সমস্যা?

Oct 17, 2024 | 7:57 PM

Assam Accord: পরিস্থিতি চরমে পৌঁছয় ১৯৮০ সালের পর। ভোটার তালিকা থেকে 'বিদেশি'দের বাদ দিতে হবে, এই দাবি নিয়ে যখন অসম উত্তপ্ত, তারই মধ্যে ১৯৮৩ সালে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। হিতেশ্বর সাইকিয়া মুখ্যমন্ত্রীও হন। এরপর আন্দোলন আরও চরম আকার নেয়।

Assam Accord: কেন তৈরি হয়েছিল অসম অ্যাকর্ড, নাগরিকত্ব নিয়ে কোথায় সমস্যা?
Image Credit source: GFX- TV9 Bangla

Follow Us

শীর্ষ আদালতে মান্যতা পেল ভারতের নাগরিকত্ব আইনের ‘৬এ’ (6A) ধারা। অর্থাৎ মান্যতা পেল ‘অসম অ্যাকর্ড’ (Assam Accord) বা ‘অসম চুক্তি’। গণ আন্দোলনের জেরে হওয়া এই চুক্তি অসমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর যে সমস্যা শুরু হয় অসমে, তার জন্যই প্রায় ১৪ বছর পর স্বাক্ষরিত হয় ‘অসম অ্যাকর্ড’। সেই চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হলেও, শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তিকেই মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ।

অসম চুক্তিতে বলা আছে, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যারা অসমে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের নাগরিক হিসেবে মান্যতা দেওয়া হবে। সেই ধারাকে মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর, ২০২৪) এই রায় দিয়েছে।

সংবিধানের ৬এ ধারায় কী বলা আছে?

১৯৮৫ সালের ‘অসম চুক্তি’ বা ‘অসম অ্যাকর্ড’ অনুযায়ী এই ধারা যুক্ত করা হয় দেশের নাগরিকত্ব আইনে। সেই ধারায় বলা আছে, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারির আগে যারা অসমে প্রবেশ করেছে, তারা ভারতের নাগরিক হিসেবে সব অধিকার পাবে। আর ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যারা ভারতে প্রবেশ করেছে, তারাও একইভাবে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার অধিকার পাবে, তবে তাঁরা ১০ বছর ভোট দেওয়ার অধিকারী হবে না। আর একটি শর্ত হল, ১৯৭১ সালের পরে যারা ভারতে প্রবেশ করেছে, তাদের শনাক্ত করে অসম থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

কেন এই ‘অসম অ্যাকর্ড’ স্বাক্ষরের প্রয়োজন পড়েছিল?

১৯৭৮ সালের পর অসমে শুরু হয় এক গণ আন্দোলন। ‘অসম মুভমেন্ট’ বা ‘অসম আন্দোলন’ নামে পরিচিত সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল ‘অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ ও ‘অল অসম গণ পরিষদ’। প্রায় ৬ বছর ধরে চলে সেই আন্দোলন। আন্দোলন কার্যত চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল অসমে। অসম অ্যাকর্ড স্বাক্ষরিত হওয়ার পর সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়।

১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় অসম অ্যাকর্ড (Assam Accord)। স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, ছিলেন অসম মুভমেন্টের নেতারা। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আসে। অসম অ্যাকর্ড অনুসারে তাতে যুক্ত হল ৬এ ধারা।

উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ বাংলাদেশে আজও পালিত হয় গণহত্যা দিসব। ১৯৭১ সালের ওই দিনটিতে পাকিস্তানের তরফে বর্বর হামলা চালানো হয়েছিল। রাজধানী ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশের সর্বত্র বাঙালিদের নিশানা করে আক্রমণ চালানো হয়েছিল। ভয়াবহ গণহত্যা চালানো হয়েছিল ওই দিন। তথ্য বলছে, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি দিনটিকে ‘কাট অফ’ ডেট হিসেবে ধরা হয়েছে, কারণ এর ফলে পরবর্তী নির্বাচনে কোনও প্রভাব পড়ত না। কারণ ১০ বছর পর পর্যন্ত ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট অনুপ্রবেশকারীদের।

উত্তাল হয়েছিল অসম, কেন হয় ‘অসম মুভমেন্ট’

আন্দোলনের সূত্রপাত ১৯৭১ সালের পর। ১৯৭১-এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে সব মানুষ এসে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে পরবর্তীতে বাংলাদেশে ফিরে যান। কিন্তু অনেকেই থেকে যান। এরপরও বেশ কয়েক বছর সব ঠিকই চলছিল। সমস্যা বাড়ে ১৯৭৮ সালের পর। ক্রমে ক্রমে সামনে আসে যে অসম জুড়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি থেকে গিয়েছেন।

১৯৭৮ সালের মার্চ মাসে হীরালাল পাটোয়ারী নামে সাংসদের মৃত্যুর পর মঙ্গলদৈ লোকসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েছিল। ওই বছরের এপ্রিল মাসেই ভোটার তালিকা সংশোধন হয়। তখনই সামনে আসে আসল পরিসংখ্যান। ৪৫০০০ সন্দেহভাজন বাংলাদেশি ব্যক্তির নাম প্রকাশ্যে আসে সেখানে। এরপরই অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন অসমের নাগরিকেরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকা থেকে না সরালে তাঁরা ভোট হতে দেবেন না।

সেই অসম আন্দোলনে শহিদ হন খড়্গেশ্বর তালুকদার। জানা যায়, নির্বাচনের প্রার্থীকে বাধা দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পরিস্থিতির হাল ধরেন। আলোচনাও হয়। কিন্তু তা অসমাপ্ত রয়ে যায়।

পরিস্থিতি চরমে পৌঁছয় ১৯৮০ সালের পর। ভোটার তালিকা থেকে ‘বিদেশি’দের বাদ দিতে হবে, এই দাবি নিয়ে যখন অসম উত্তপ্ত, তারই মধ্যে ১৯৮৩ সালে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। হিতেশ্বর সাইকিয়া মুখ্যমন্ত্রীও হন। এরপর আন্দোলন আরও চরম আকার নেয়। ওই বছরই অসমের নেলী নামক একটি জায়গায় শয়ে শয়ে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হয়। সেই নেলীর হত্যাকাণ্ডে ১৮০০ জনকে হত্যা করা হয়। এরপর সরকার তৎপর হয়।

১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর নেতৃত্বে আবারও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় অসম অ্যাকর্ড। অসম অ্যাকর্ড অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সীমান্ত রক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় দেওয়াল বা ফেন্সিং দিয়ে সীমান্ত সুরক্ষিত করার কথা বলা হয়।

কেন হল মামলা?

নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। আবেদনকারীদের দাবি, ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য, নাগরিকত্ব ও ভ্রাতৃত্ব, যা সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, তা লঙ্ঘন করছে এই ৬এ ধারা। সংবিধানের আর্টিকল (অনুচ্ছেদ) ১৪, আর্টিকল ১৯ ও আর্টিকল ২১ লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়।

আবেদনকারীদের দাবি ছিল, নাগরিকত্ব আইনে ৬এ ধারা অসাংবিধানিক বলে চিহ্নিত করে বাতিল করতে হবে। সীমান্তে প্রাচীর তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিতে হবে কেন্দ্রকে। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে অসম থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

কী বলল সাংবিধানিক বেঞ্চ

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এম আর শাহ, বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারী, বিচারপতি হিমা কোহলি, বিচারপতি পিএস নরসিংহের সাংবিধানিক বেঞ্চে চলছিল মামলা। বৃহস্পতিবার ৬এ ধারাকে বৈধ ও সাংবিধানিক বলে মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে মান্যতা পেয়েছে ১৯৮৫ সালে স্বাক্ষর হওয়া অসম চুক্তি।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত সমস্যার একটি সমাধান হল এই অসম অ্যাকর্ড। আদালতের বক্তব্য, এই চুক্তির ফলে একদিকে মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে স্থানীয় মানুষকেও সুরক্ষিত করা হয়েছে।

Next Article