Pakistan: সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তান, তবু ইসলামাবাদের ‘ভাবনায়’ কেন শুধু ভারত?
Pakistan: ভারতের বিরোধিতা করে চলেছে পাকিস্তান। কিন্তু, পাকিস্তানের শিল্পপতিরা ভারতের সহযোগিতা চাইছেন। দেশে প্রবল অর্থসঙ্কট। বেসরকারি লগ্নি হচ্ছে না। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পাকিস্তানে বেসরকারি লগ্নি কমেছে ১৯ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চাইছেন পাকিস্তানের শিল্পপতিরা। কিন্তু, পাকিস্তান কেন ভারতের বিরোধিতা করে চলেছে?
দুই পড়শি দেশ। একটি দেশ অর্থনীতিতে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আর অপর দেশটি মুদ্রাস্ফীতির জালে জর্জরিত। কর্মসংস্থান নেই। বর্তমানে, এটাই চিত্র ভারত ও পাকিস্তানের। তবু ভারতকে ‘অস্বস্তি’-তে ফেলার চেষ্টায় খামতি রাখছে না পাকিস্তান। কূটনীতিকরা বলছেন, নিজেদের দেশের সমস্যা মেটানোর চেয়ে ভারতকে নিয়ে বেশি ভাবছে পাকিস্তান। কিন্তু, কেন? ভারতের বিরোধিতা করে লাভ কি পাকিস্তানের?
বিশ্ব মঞ্চে ক্রমশ গুরুত্ব বাড়ছে ভারতের। এই মুহূর্তে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। সেইসময় সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কাঠগড়ায় পাকিস্তান। কয়েকমাস আগে পুঞ্চের সুরানকোটে বায়ুসেনার কনভয়ে লস্কর-ই-তৈবা হামলা চালিয়েছিল। এই হামলার পিছনে পাক সেনা-প্রশাসনের ওপরমহলের হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন কূটনীতিকরা। ওই হামলার মাস্টারমাইন্ড পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের লস্কর নেতা সাজিদ জাট। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে এম-৪ কার্বাইন। স্টিলের পাতে মোড়া চিনা বুলেট। পাক জঙ্গিরা যে চিনে তৈরি কার্তুজ ব্যবহার করে, তা কারও অজানা নয়। আর এই হামলার মাথা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা। ফলে পাকিস্তানের মাটি থেকেই নাশকতার ছক কষা হয়েছিল বলে সন্দেহ। ওই হামলার কয়েকদিন আগেই সেনার এক অনুষ্ঠানে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ভারতকে চরম শত্রু বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে কাশ্মীরের মানুষের পাশে আছে পাকিস্তান। ঠিক তার পরেই এই হামলা।
ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চাইছেন পাকিস্তানের শিল্পপতিরা-
ভারতের বিরোধিতা করে চলেছে পাকিস্তান। কিন্তু, পাকিস্তানের শিল্পপতিরা ভারতের সহযোগিতা চাইছেন। দেশে প্রবল অর্থসঙ্কট। শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বেসরকারি লগ্নি হচ্ছে না। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পাকিস্তানে বেসরকারি লগ্নি কমেছে ১৯ শতাংশ। বেসরকারি লগ্নির বাড়ানোর আবেদন নিয়ে পাক কর্পোরেট জগতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেখানেই তাঁকে শুনতে হল ভারতের প্রশংসা। পাকিস্তানের একটি সংস্থার চেয়ারম্যান আরিফ হাবিব বলেন, “আমাদের প্রতিবেশীর দিকে হাত বাড়াতেই হবে। আপনি এই কাজ শুরু করেছেন। এটা আপনিই করতে পারেন। বিশেষত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল হওয়া প্রয়োজন।”
আরিফ হাবিবের সংস্থা ছাড়াও ওই বৈঠকে আরও ৬টি শিল্পগোষ্ঠী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ফের চালু করার পক্ষে সওয়াল করে। পাক প্রধানমন্ত্রী কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি। কারণ বল তাঁর কোর্টে নেই। আর সেটা স্পষ্ট হতে বেশি সময় লাগেওনি।
ভারতের বিরোধিতা করে চলেছে পাক সেনা-
পাক বায়ুসেনার পাসিং আউট প্যারেড থেকে কাশ্মীর নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পাক সেনাপ্রধান। পাক সংবাদপত্র দ্য নেশনের প্রতিবেদনে দাবি, ভারতীয় বায়ুসেনার সমকক্ষ হতে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন পাক সেনাপ্রধান। আসিম মুনিরের হয়তো আশঙ্কা, দেশে আর্থিক সঙ্কটে সেনার মনোবল নড়ে যেতে পারে। তাই ভারত থেকে ফোকাস সরতে দিতে নারাজ পাক সেনাপ্রধান।
পাক সংসদে ভারতের কথা-
ভোটের মুখে দেশে ফেরার পর ভারতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গিয়েছিল পিএমএলএন নেতা নওয়াজ শরিফকে। ভারত চাঁদে পৌঁছে গিয়েছে আর পাকিস্তান আর্থিক অনুদান চেয়ে দেশে দেশে ঘুরছে-নওয়াজ শরিফের সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পরও পাক সংসদেই বারবার ঘুরে-ফিরে আসে ভারতের প্রসঙ্গ।
পাকিস্তানের সংসদে সেদেশের বর্ষীয়ান নেতা মৌলানা ফজলুর রহমান বলেন, “ভারত এখন দুনিয়ার সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তার আমরা দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচতে ভিক্ষা করছি। দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাটাই এখন লক্ষ্য।”
পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ তিলক দেবেশ্বর হিসাব কষে দেখিয়েছেন, গত দেড় মাসে পাক সংসদের অধিবেশনে ১৬ বার উঠেছে ভারতের প্রসঙ্গ। কখনও, কখনও সেটা তর্কাতর্কিতেও গড়িয়েছে। পাক সংসদে যে অবস্থা, রাষ্ট্রপুঞ্জেও তাই। সুযোগ পেলেই বারবার ভারতকে নিয়ে নানা অভিযোগ করা অভ্যাসে পরিণত করেছে পাকিস্তান।
গত ১২ মাসে ভারতকে নিয়ে ৫টি অভিযোগ করেছে পাকিস্তান। ৩ বার সাধারণ সভায় প্রস্তাব আনার চেষ্টা করেছে। বেশ কয়েকটা ইস্যু নিয়ে ধাক্কা খাওয়ার পর এখন পাকিস্তানের অভিযোগ, তাদের দেশে টার্গেট কিলিং চালাচ্ছে ভারত। মানে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে বেছে বেছে খতম করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্টকে হাতিয়ার করে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব আনতে উদ্যত হয়েছিলেন পাক প্রতিনিধি মুনির আক্রম।
জবাব দিতে দেরি করেনি ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি রুজিরা কম্বোজ বলেছিলেন, “একটি দেশের প্রতিনিধির বিশেষ উদ্দেশ্যে আনা অভিযোগ আমরা খারিজ করছি। পদ্ধতির তোয়াক্কা না করেই এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই অভিযোগ ভুয়ো, উদ্দেশ্যমূলক। শুধু বিভ্রান্তি তৈরির জন্যই অভিযোগ আনা হয়েছে।”
ভারত এখানেই থেমে থামেনি। পাকিস্তানের কূটনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে কড়া নোট দিয়েছে। সেখানে বক্তব্য, দায়িত্বশীল কোনও দেশ কূটনীতির শিষ্টাচারের বাইরে যেতে পারে না। যে দেশের অতীত এতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাদের থেকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার আশা করা যায় না। তবে তারা যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক সময়ে বারবার কাশ্মীর, নাগরিকত্ব আইন, রামমন্দির নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলতে চেয়েছে পাকিস্তান। একবারও সাফল্য পায়নি। তবু পাকিস্তান চেষ্টা ছাড়ে না। ভারত কিন্তু গত ৫ বছরে পাকিস্তান থেকে ফোকাস সরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রাক্তন প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিনের বক্তব্য, পাকিস্তানকে নিয়ে চিন্তাভাবনা অনেক দিন আগেই বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। বর্তমান বিশ্বে পাকিস্তান গুরুত্বহীন এক দেশ। ভারত না ভাবলেও পাকিস্তান ভাবনা ছাড়তে পারছে কই? আসলে পাকিস্তানের রাজনীতিটাই এখন ভারতকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। কেউ ভারতের সঙ্গে শত্রুতা চাইছে, তো কেউ বন্ধুতা। দিশেহারা অবস্থায় যেমন হয় আর কী!