নয়া দিল্লি: ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের শেষ স্বাধীনতা দিবস। কাজেই স্বাধীনতা দিবস উদযাপনও রাজনীতির সংঘাত মুক্ত থাকল না। একদিকে, লালকেল্লা থেকে দুর্নীতি, তোষণ এবং পরিবারবাদের রাজনীতির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে, শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে লালকেল্লার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠান এড়ালেও, পাল্টা ভিডিয়ো বার্তা জারি করে তীব্র আক্রমণ করলেন মোদী সরকারকে। দেশ গঠনে শুধু নেহরু-গান্ধী পরিবারের অবদান নয়, সকল প্রধানমন্ত্রীর অবদান তুলে ধরলেন কংগ্রেস সভাপতি। এমনকি, এই তালিকায় যুক্ত করেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামও। একবারও নেননি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম। তবে, তাঁর বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। একই সঙ্গে দাবি করেছেন, গণতন্ত্র এবং সংবিধানের উপর বড় বিপদ নেমে আসছে। ইউপিএ থেকে ইন্ডিয়া – জোটের নাম বদল নিয়ে ওঠা প্রশ্নেরও পাল্টা জবাব দিয়েছেন খাড়্গে।
খাড়্গে বলেন, স্বাধীনতার পর ভারত বর্তমানে বিশ্বের একটি বড় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিছু লোক বোঝাতে চাইছে, গত কয়েক বছরেই দেশের প্রগতি হয়েছে। কিন্তু, এটা কয়েক বছরে হয়নি। কারণ দেশ গঠন একটা প্রক্রিয়া। স্বাধীনতার নায়করা, স্বাধীন দেশের সকল প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সকল মানুষের প্রচেষ্টায় দেশ আজ এই জায়গায় এসেছে। এরপরই দেশ গঠনে গান্ধী-নেহরু পরিবারের ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জওহরলাল নেহেরু ইস্পাত কারখানার মতো বড় বড় শিল্প, তিনটি বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, আইআইটি-আইআইএম-এইমস-এর মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। মহাকাশ গবেষণা এবং পরমাণু শক্তি গবেষণার সূচনা করেছিলেন। শিল্পকলা, সাহিত্য, সঙ্গীতকেও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান খাড়্গে।
লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও ইন্দিরা গান্ধী সবুজ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশকে শাক-সবজি উৎপানের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করেছিলেন। শ্বেত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ভারতকে বিশ্বের দুগ্ধ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত করেছিলেন। পাকিস্তানকে পরাস্ত করে বাংলাদেশ গঠন করেছিলেন, বিশ্বের মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন কংগ্রেস সভাপতি। দারিদ্র্য দূরীকরণে ইন্দিরা গান্ধী এবং পরবর্তী সময়ে ইউপিএ-র ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি আরও দাবি করেন, টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি এবং কম্পিউটার বিপ্লব এনে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের জন্য ভারতকে প্রস্তুত করেছিলে রাজীব গান্ধী। দেশে শান্তি সম্প্রীতি রক্ষা করতে উত্তর-পূর্বে অসম চুক্তি, মিজো চুক্তি, শিলং চুক্তি এবং পঞ্জাবে পঞ্জাব চুক্তি স্বাক্ষরের কথাও তুলে ধরেন খাড়্গে। গণতন্ত্রে তরুণদের যোগদান এবং পঞ্চায়েত রাজকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও রাজীব গান্ধীর ভূমিকা জানান তিনি। আর্থিক উদারীকরণের কৃতিত্ব দেন পিভি নরসিমা রাও এবং ড. মনমোহন সিং-কে। তিনি আরও বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী-সহ দেশের সকল প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা ছিল দেশের উন্নয়ন।
কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্যের পরবর্তী অংশ জুড়ে ছিল মোদী সরকারকে আক্রমণ। তিনি জানান, আজ গণতন্ত্র, সংবিধান এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের উপর অনেক বড় বিপদ নেমে আসছে। বিরোধীদের কন্ঠস্বর রোধ করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্সের রেইডের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকেও দুর্বল করা হচ্ছে। সংসদে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কারোর বক্তব্য রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “নতুন ইতিহাস রচনা করার জন্য মহান ব্যক্তিদের ইতিহাসকে বিকৃত করতে হয় না।” খাড়্গে অভিযোগ করেন, “পুরোনো প্রকল্পের নাম বদলে নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে, পুরোনো পরিকাঠামো প্রকল্পে নতুন শিলা লাগিয়ে নিজেদের নাম জুড়ে দিচ্ছে। পুরোনো আইন যা দেশকে শান্তি-স্থিতি দিয়েছে, তার নাম বদলে দিয়ে ইতিহাস রচনার দাবি করছে। প্রথমে আচ্ছে দিন, তারপর নয়া ভারত, তারপর অমৃতকালের স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এটা কি নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে নাম বদল নয়?” স্পষ্টতই তাঁর এই মন্তব্য, ইউপিএ জোটের নাম বদলে ইন্ডিয়া করার অভিযোগের জবাব।
কাজেই, ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে রাজনৈতিক ঐক্য নয়, দেশের রাজনৈতিক ভেদাভেদের ছবিটাই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। দেশের শততম স্বাধীতা দিবসের মধ্যে, উন্নত দেশের তালিকায় সামিল হতে চাইছে ভারত। রাজনৈতিক এই দুই মেরু কাছাকাছি না আসতে পারলে কি সেই লক্ষ্য অর্জন করা যাবে? প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে ২০২৩-এই।