চেন্নাই: জৈব যুদ্ধ ও রাসায়নিক যুদ্ধের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। তাদের এই কর্মসূচির জন্য নিষিদ্ধ রাসায়নিকের একটি চলান নিয়ে যাচ্ছিল একটি চিনা জাহাজ। তামিলনাড়ুর এক বন্দরে চালান-সহ জাহাজটিকে আটক করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। জানা গিয়েছে, অর্থো-ক্লোরো বেনজিলিডিন ম্যালোনোনিট্রিল (সিএস)-সহ বেশ কিছু নিষিদ্ধ রাসায়নিক ছিল ওই চালানের মধ্যে। টিয়ার গ্যাস এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত করা হয় অর্থো-ক্লোরো বেনজিলিডিন ম্যালোনোনিট্রিল (সিএস)। প্রতিটি রাসায়নিকেরই দ্বৈত ব্যবহার রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ, এই রাসায়নিকগুলি অসামরিক ও সামরিক – দুই উদ্দেশ্যেই এই রাসায়নিকগুলি ব্যবহার করা যায় বলে জানা গিয়েছে। এই ধরনের রাসায়নিকগুলিই বিপুল পরিমাণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তো আছেই, এই রাসায়নিকরগুলি রফতানিতে ভারতেরও নিষেধাজ্ঞা আছে। এই ধরনের রাসায়নিকের বিপুল পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই চালানটি আটক করেছে।
কাস্টমস কর্তারা জানিয়েছেন, চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে চিনা সংস্থাগুলি। দ্বৈত ব্যবহারের রাসায়নিকগুলি বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে, সেই নেটওয়ার্ক ফাঁস করে দিয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে চালানটির ওজন ছিল ২৫৬০ কেজি। চিনা ফার্ম, চেংডু শিচেন ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড এই চালান পাঠিয়েছিল। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির প্রতিরক্ষা সরবরাহকারী সংস্থা, রোহেল এন্টারপ্রাইজের কাছে পাঠানো হচ্ছিল নিষিদ্ধ রাসায়নিকগুলি। তাই, এই রাসায়নিকগুলিকে সামরিক কাজে লাগানো হত বলেই আশঙ্কা করছেন কাস্টমস কর্তারা। ২৫ কেজি ওজনের ১০৩টি ড্রামে করে চালানটি পাঠানো হচ্ছিল। ২০২৪-এর ১৮ এপ্রিল, মালবাহী জাহাজটি চিনের সাংহাই বন্দর থেকে সাইপ্রাসের পতাকা নিয়ে করাচির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। ৮মে জাহাজটি তামিলনাড়ুর কাট্টুপল্লী বন্দরে পৌঁছেছিল।
১৯৬২ সালের কাস্টমস অ্যাক্ট, এবং ২০০৫ সালের ওয়েপন্স অব মাস ডেস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেলিভারি সিস্টেমস প্রতিরোধ আইনের অধীনে চালানটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। রফতানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ে ওয়াসেনার ব্যবস্থা চুক্তি করা হয়েছিল। ভারত-সহ বিশ্বের ৪২টি দেশ এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, এই ব্যবস্থার সদস্যরা অস্ত্র স্থানান্তর এবং দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য ও প্রযুক্তি রফতানি সংক্রান্ত তথ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। তবে, পাকিস্তান ও চিন ওয়াসেনার ব্যবস্থায় স্বাক্ষর করেনি।
পাকিস্তানে যে চিন এই ধরনের ‘দ্বৈত-ব্যবহারের’ পণ্য সরবরাহ করছে, সেই খবর আগেই ছিল ভারতের কাছে। চলতি বছরের গোড়াতেই, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য নির্ধারিত উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার নাম্বার কন্ট্রোলের যন্ত্রাংশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। সিএনসি মেশিনারি বাজেয়াপ্ত করার পর থেকে এই বিষয়ে সতর্কতা বাড়িয়েছে ভারত।