নিউ ইয়র্ক: রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে সরাসরি সন্ত্রাসবাদীর পক্ষে দাঁড়িয়েছে চিন। লস্কর-ই-তৈবার কমান্ডার তথা ২৬/১১ মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড সাজিদ মীরকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ হিসাবে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য যৌথ প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত ও আমেরিকা। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে সেই প্রস্তাবে বাধা দিয়েছে চিন। চিনের এই নেতিবাচক ভূমিকার জন্য বেজিং-এর তীব্র নিন্দা করেছে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী বৈঠকে চিনের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুদ্র ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ’রক্ষার্থে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার অভিযোগ জানিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রপুঞ্জের রাজনীতি বিষয়ক যুগ্ম সচিব প্রকাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, বিভিন্ন সদস্য দেশের সমর্থন পাওয়ার পরও এই প্রস্তাবটি একটি মূল বাধা টপকাতে পারেনি। এই প্রস্তাব পাস না হওয়া থেকেই স্পষ্ট যে, এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থায় ‘একটা কিছু গুরুতর গন্ডগোল’ রয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, “ক্ষুদ্র ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য আমরা যদি বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসবাদীদেরও রাষ্ট্রপুঞ্জে নিষিদ্ধ করতে না পারি, তাহলে বলতে হবে, সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে আন্তরিক লড়াইয়ের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই।”
এই ফাঁক ফোকর মিটিয়ে ফেলার জন্য, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রকাশ গুপ্ত। সেই সঙ্গে চিনের নাম না করে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে দ্বৈত অবস্থান গ্রহণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি সাফ জানিয়েছেন, ‘ভাল সন্ত্রাসবাদী, খারাপ সন্ত্রাসবাদী বলে কিছু হয় না। যে কোনও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডকেই সন্ত্রাসবাদ বলে চিহ্নিত করা উটিত। তার জন্য যে যুক্তিই দেওয়া হোক না কেন, তা কারও গ্রহণ করা উচিত নয়।” প্রসঙ্গত, ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা কমিটিতে, সাজিদ মীরকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করার যৌথ প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, ‘টেকনিক্যাল’ কারণ দেখিয়ে সেই প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছিল বেজিং। মঙ্গলবার, চিন সরাসরি এই প্রস্তাব পাসে বাধা দিয়েছে। উল্লেখ্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কোনও একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার জন্য সমস্ত সদস্য দেশের ঐকমত হওয়া প্রয়োজন। চিনের বিরোধিতাতেই সাজিদ মীরকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করা গেল না।
ভারত এবং আমেরিকা – দুই দেশেরই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় সাজিদ মীরের নাম রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর মাথায় দাম ধার্য করেছে ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার। মার্কিন ফেডেরাল তদন্ত সংস্থার মতে, ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিল সাজিদ মীর। পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন – হামলার প্রতি স্তরে তার বড় ভূমিকা ছিল। ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাজিদ মীরকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এর পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক্তিয়ারে থাকা সাজিদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। মার্কিন নাগরিকদের তার সঙ্গে সবরকম লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়।
এখনও সে পাকিস্তানেই আছে। সাজিদ যে তাদের দেশে আছে, দীর্ঘদিন ধরে তা অস্বীকার করেছিল ইসলামাবাদ। একসময়তারা দাবি করেছিল যে এই জঙ্গি নেতার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকাভুক্ত হওয়ার পর, চাপে পড়ে ২০২২ সালে তাকে গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তান পুলিশ। লাহোরের এক সন্ত্রাসবিরোধী আদালত সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানের এক মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। ৪ লক্ষ ২০ হাজার পাকিস্তানি টাকা জরিমানা-সহ তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।