নয়া দিল্লি: দুই বরখাস্ত হওয়া বিজেপি বিধায়কদের কুরুচিকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এরই মধ্যে, মুসলিম দেশগুলির গোষ্ঠী, ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক স্টেটস’ বা ‘ওআইসি’-র এই বিষয়ে করা মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘সংকীর্ণমনা’ বলে খারিজ করে দিল ভারত। রবিবার (৬ জুন), একর পর এক আরব উপসাগরীয় দেশ নুপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দলের মন্তব্যের নিন্দা করেছিল। একইভাবে ওই কুরুচিকর মন্তব্যের নিন্দা করেছিল ‘ওআইসি’-ও। সোমবার এর জবাবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘ভারত স্পষ্টভাবে ওআইসি সচিবালয়ের অযৌক্তিক এবং সংকীর্ণমনা মন্তব্যকে খারিজ করছে। সব প্রান্তের সব ধর্মের প্রতিই ভারত সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে’।
শুধু তাই নয়, ওই বিতর্কিত মন্তব্য একেবারেই ওই দুই প্রাক্তন বিজেপি নেতা-নেত্রীর ব্যক্তিগত মত বলেও দাবি করেছে বিদেশ মন্ত্রক। এই প্রেক্ষিতে তাদের দুজনকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘আপত্তিকর টুইটগুলি এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি। সেগুলি কোনওভাবেই ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়। প্রাসঙ্গিক সংস্থা ইতিমধ্যেই এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে’। তিনি আরও বলেন, ‘ওআইসি সচিবালয় আবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিভ্রান্তিকর এবং হানিকর মন্তব্য করল, এটা দুঃখজনক। স্বার্থান্বেষী মহলের তাগিদে এই গোষ্ঠীর বিভাজনমূলক এজেন্ডাকেই ফাঁস করেছে এই মন্তব্য। আমরা ওআইসিকে তাদের সাম্প্রদায়িক অভিমুখ ছেড়ে সমস্ত ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান জানানোর আর্জি জানাব’।
Our response to media queries regarding recent statement by General Secretariat of the OIC:https://t.co/961dqr76qf pic.twitter.com/qrbKgtoWnC
— Arindam Bagchi (@MEAIndia) June 6, 2022
রবিবারই, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য নুপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দলকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি। অথচ, তারপর থেকে একের পর এক আরব দেশ থেকে, ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের ক্ষমা প্রার্থনা দাবি করা হয়েছিল। প্রথমে কাতার, তারপর একে একে কুয়েত, ইরান, সৌদি আরব এবং সবশেষে ওই দুই বরখাস্ত হওয়া বিজেপি নেতার মন্তব্যের নিন্দা করে সরকারি বিবৃতি জারি করেছিল। পাকিস্তান আবার এক কদম এগিয়ে ওআইসির হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল। এরপরই ৫৭টি প্রধানত মুসলিম দেশের এই গোষ্ঠী বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা করে। শুধু তাই নয়, ভারতে ‘পদ্ধতিগতভাবে’ সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ওআইসি।
গত কয়েক বছরে বারবারই ‘ওআইসি’-কে ভারতের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে, সেখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে বারবার তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে ভারত সরকার যে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস করেছে, তাই নিয়েও আপত্তি প্রকাশ করেছিল এই মুসলিম দেশগুলির সংগঠন। এমনকী, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছিল এই রাষ্ট্র গোষ্ঠী। ভারত বারবারই দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে ওআইসি-র এই হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মধ্যস্থতার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিল নয়া দিল্লি। শুধু তাই নয়, সাউথ ব্লক দাবি করেছে, ওআইসি-র এই সকল পদক্ষেপ আসলে পাকিস্তানের চাপেই নেওয়া।