নয়া দিল্লি: মহাকাশে চাঁদ েকে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে গিয়েছে ভারত। আর এবার অভিযান মহাকাশের কোনও অচেনা অংশে নয়, আমাদের পৃথিবীরই এক অচেনা, স্বল্পজানা অংশে। গভীর সমুদ্রে ডুব দেবে সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে তৈরি, মানব বহনে সক্ষম সাবমার্সিবল, মৎস্য ৬০০০ (MATSYA-6000)। পৃথ্বী বিজ্ঞান মন্ত্রক এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশান টেকনোলজি জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এই ডুবোজাহাজের বিভিন্ন অংশ জোড়ার কাজ শেষ হয়েছে। এবার হবে ‘ওয়েট টেস্ট’। অর্থাৎ, সমুদ্রের ৬০০০ মিটার গভীরে মৎস ৬০০০-এর কর্মক্ষমতার মূল্যায়ন করা হবে। আসন্ন অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বা নভেম্বরের শুরুতেই হবে এই পরীক্ষা। কাজেই বলা যেতে পারে, মহাকাশের পাশাপাশি গভীর-সমুদ্র অনুসন্ধানেও তার ক্ষমতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত ভারত।
হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মৎস্য অবতারের নামানুসারে ভারতের এই ডুবোযানের নামকরণ করা হয়েছে। এটা ভারতের সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণায় এক বড় অগ্রগতি বলে চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা। সমুদ্রের নীচে ৬,০০০ মিটার গভীরতায় ডুব দিতে পারে এই যান। পৃথিবীর সবথেকে উঁচু পাহাড়, মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮,৮৪৯ মিটার। এর সঙ্গে তুলন করলেই বোঝা যায়, সমুদ্রের ঠিক কতটা গভীরে ডুব দিতে চলেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বুকে হলেও, আজও মহাসাগরের বেশ কিছু জায়গায় প্রায় পৌঁছতেই পারেনি বিজ্ঞানীরা। সেই সব স্বল্পজানা স্থানের রহস্যভেদ করতে যাবে মৎস্য-৬০০০। এই সাবমার্সিবল বা ডুবোযানে উন্নত মানের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম, নেভিগেশন সিস্টেম, নমুনা সংগ্রহের জন্য রোবোটিক যন্ত্রপাতি এবং হাই-রেজোলিউশন ইমেজিং সিস্টেম-সহ অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
অক্টোবরের ওয়েটয়েস্ট এই অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। চেন্নাই বন্দরে ১৫ মিটার গভীরতায় প্রথম পরীক্ষা করা হবে। অভিযানের সময়, এর যাত্রীরা যে সমস্ত সম্ভাব্য পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে তার অনুকরণ করা হবে। এরপর, ২০২৫ সালে করা হবে শ্যালো ওয়েট টেস্ট। প্রথম ওয়েট টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে ডুবোযানটির মান আরও উন্নত করার পরই অগভীর জলে এই পরীক্ষা করা হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে গভীর সমুদ্রে মানুষ ছাড়া পাঠানো হবে যানটিকে। গভীর-সমুদ্রে জলের তীব্র চাপের মধ্যে হাল কীরকম কাজ করছে, যানটির প্রোপালশন এবং চলন, লাইফ সাপোর্ট ব্যবস্থার দক্ষতা এবং জলের নীচ থেকে ভূপৃষ্ঠে যোগাযোগের ক্ষমতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির পরীক্ষা করা হবে। এতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, ডুবোযানটি পূর্ণ মাত্রার গভীর-সমুদ্র অভিযানের জন্য প্রস্তুত কিনা।
একবার চালু হলে, মৎস্য ৬০০০ ভারতের গভীর-সমুদ্রে, বিশেষ করে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গবেষণার ক্ষমতাকে একলাফে অনেকটা বাড়িয়ে দেবে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা গভীর-সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের অধ্যয়ন, জলের নীচের খনিজ সম্পদ অন্বেষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত সামুদ্রিক পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তাছাড়া, ভারত মহাসাগরে ভারতের কৌশলগত এবং বৈজ্ঞানিক উপস্থিতিও বাড়বে। ভারতের এই ওয়েট টেস্টের দিকে এখন গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানী সম্প্রদায় তাকিয়ে রয়েছে।