Germany: যৌন নির্যাতনের সন্দেহ, কোলের সন্তান আটকে জার্মানিতে; ভারতে ফেরাতে মোদীর দ্বারস্থ দম্পতি

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Mar 10, 2023 | 5:46 PM

Indian child in German child rights' custody: কোলের সন্তানকে তাঁদের কাছ থেকে একপ্রকার কেড়ে নিয়ে গিয়েছে জার্মান সরকার। দেশে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ দম্পতি।

Germany: যৌন নির্যাতনের সন্দেহ, কোলের সন্তান আটকে জার্মানিতে; ভারতে ফেরাতে মোদীর দ্বারস্থ দম্পতি
মুখের এই হাসিই হারিয়ে গিয়েছে বাবা-মায়ের

Follow Us

মুম্বই: কোলের সন্তানকে তাঁদের কাছ থেকে একপ্রকার কেড়ে নিয়ে গিয়েছে জার্মান সরকার। এমনই দাবি এক ভারতীয় দম্পতির। তাঁদের মেয়ের বয়স মাত্র তিন। এর মধ্যে দেড় বছরই সে রয়েছে জার্মান চাইল্ড কেয়ার সার্ভিসের হেফাজতে। বাবা-মা শিশুটিকে যৌন নিপীড়ন করেছেন, এমন গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। অথচ, একের পর এক রিপোর্টে তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। তারপরও, ভিন্ন ভিন্ন কারণে বাবা-মায়ের হাতে শিশুটিকে তুলে দিতে অস্বীকার করেছে জার্মান সরকার। ভারতীয় দম্পতির মতে, অনেক ক্ষেত্রেই জার্মানি এবং ভারতের সাংস্কৃতিক পার্থক্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। জার্মান কর্তৃপক্ষকে ভারতীয় আচার-আচরণ বোঝাতে পারেননি তাঁরা। সেই ভুল বোঝাবুঝির কারণেই শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করছে জার্মান সরকার। এই অবস্থায় সন্তানকে ফিরে পেতে ভারত সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, দুজনের কাছেই এই বিষয়ে জার্মান সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রফাসূত্র বের করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।

যৌন নির্যাতনের সন্দেহ

এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। কর্মসূত্রে জার্মানিতেই থাকতেন এই দম্পতি। খেলতে খেলতে গোপনাঙ্গে আঘাত পেয়েছিল তাঁদের মেয়ের। বাবা-মা তাকে এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার কিছু হয়নি বলে আশ্বস্ত করেছিলেন জার্মান ডাক্তার, কিন্তু তিনি সেখানকার চাইল্ড সার্ভিসকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তারা মেয়েটিকে হেফাজতে নিয়েছিল। দম্পতিকে জানানো হয়েছিল, তাদের শিশুর আঘাতের প্রকৃতি যেই রকম, তাতে তাঁদের সন্দেহ শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। সন্দেহ মুক্ত হতে দম্পতি জার্মান কর্তৃপক্ষকে তাঁদের ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন। ডিএনএ পরীক্ষা, পুলিশি তদন্ত এবং মেডিকেল রিপোর্টে তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে যৌন নির্যাতনের মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল।

মনোবিজ্ঞানীর রিপোর্ট

কিন্তু এত কিছুর পরও, কন্যাকে ফিরে পাননি এই ভারতীয় দম্পতি। শিশুটিকে লালন পালন করার মতো যোগ্যতা তাদের নেই, এমন দাবি করে জার্মান চাইল্ড সার্ভিস শিশুটিকে তাদের হেফাজতে দিতে অস্বীকার করেছিল। এর বিরুদ্ধে আদালতে যান বাবা-মা। আদালত তাদের অভিভাবক হওয়ার ক্ষমতার বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করার আদেশ দিয়েছিল। এক মনোবিজ্ঞানী তাঁদের সঙ্গে মাত্র ১২ ঘন্টা কথা বলেছিলেন। এক বছর পর তিনি একটি ১৫০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়, বাবা-মা এবং সন্তানের মধ্যে বন্ধন খুবই দৃঢ়। তাই, বাবা-মায়ের কাছে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু, সন্তানকে কীভাবে লালন-পালন করতে হবে সেই সম্পর্কে মা-বাবার ধারণা নেই। তাই মেয়েটির বয়স ৩ থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত না হওয়া পর্যন্ত মেয়েটিকে বাবা-মায়ের কাছে ফেরানো যাবে না। ওই বয়সে পৌঁছলে শিশুকন্যাটি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে চায়, না কি চাইল্ড কেয়ারে থাকতে চায়। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছিল যে, তার বাবা-মা তাকে যত খুশি খেতে দেন। তাকে তার ইচ্ছা মতো খেলতে দেন। তাকে যথেষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টা করেননি। এছাড়া শিশুটি অন্য মানুষের সঙ্গে সেভাবে মিশতে পারে না। কারণ সে সবসময় নিজে নিজে সব কিছু করতে চায়।

শিশুটিকে দেশে ফেরাতে শুরু হয়েছে আন্দোলন

ভারতে ফেরানো যাবে না

এরপর, আদালতে মামলাটি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বলে শিশুটিকে ভারতে নিয়ে আসার আবেদন করেছিলেন তার বাবা-মা। কিন্তু জার্মান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিশুটিকে ভারতে ফেরত পাঠানো যাবে না। কারণ সে কোনও ভারতীয় ভাষা জানে না। এর ফলে ভারতে এলে সে মানসিক আঘাত পেতে পারে। এর জবাবে, তার বাবা-মা তাকে একটি ভারতীয় ভাষা শেখানোর অনুমতি চেয়েছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন, অন্য কোনও শিক্ষক বা স্বেচ্ছাসেবক বা কোনও পরামর্শদাতার প্রয়োজন নেই। বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরাই এই কাজটি করতে পারবেন। জার্মানির ভারতীয় সম্প্রদায়ের অনেকেই শিশুটিকে হিন্দি বা গুজরাটি শেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, জার্মান সরকার রাজি হয়নি। ভারতীয় ভাষা শেখানোর জন্য তারা আলাদা করে একজন শিক্ষক নিয়োগের আদেশ দিয়েছে। এদিকে সম্প্রতি শিশুটির বাবার আইটি সংস্থার কাজ চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষক নিয়োগের মতো অর্থও তাঁর হাতে নেই।

প্রতি মাসে মাত্র এক ঘণ্টার সাক্ষাৎ

এই অবস্থায় একজন সমাজকর্মীর তত্ত্বাবধানে প্রতি মাসে মাত্র এক ঘণ্টা করে মেয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েথে তার বাবা-মাকে। তাদের মেয়ের সঙ্গে যাতে আরও বেশি দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়, তার জন্য আবেদন করেছিলেন তারা। কিন্তু তাতে মেয়েটি ক্লান্ত হয়ে পড়বে, এই যুক্তি দেখিয়ে সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। যদিও ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে আদালত মাসে দুইবার দেখা করার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু, জার্মান শিশু পরিষেবা, আদালতের আদেশও মানছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভারতীয় দম্পতি।

অপরাধীর থেকেও খারাপ ব্যবহার

এই অবস্থায় এই ভারতীয় দম্পতি বলেছেন, “আমরা বারংবার বলেছি যে, ও একজন ভারতীয় শিশু। ওর ভারতীয় ভাষা, ভারতীয় সংস্কৃতি শেখা উচিত। তার জন্য আমরা কনস্যুলার অ্যাক্সেসের দাবিও জানিয়েছিলাম। অপরাধীরাও কনস্যুলার অ্যাক্সেস পায়, কিন্তু আমাদের মেয়ের সঙ্গে একজন অপরাধীর থেকেও খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। জার্মানিতে ন্যায্য বিচার পাইনি বলেই আমরা ওকে ভারতে আনতে চাই। দুই দেশের সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে। জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অনুরোধ করছি যে ওকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছেও সমস্যাটি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছি। প্রধানমন্ত্রী মোদী যদি হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে এর সমাধান হয়ে যাবে।”

Next Article