নয়া দিল্লি: বায়ুসেনার জন্য রাফাল এসেছে ইতিমধ্যেই। এবার কি নৌসেনার হাতেও রাফাল তুলে দেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক? ফ্রান্সের থেকে মেরিন রাফাল বা রাফাল এম কেনা নিয়ে বহুদিন ধরেই কথাবার্তা চলছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, আগামী মাসে ফ্রান্স সফরে যেতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই রাফাল-এম সহ একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা ঘোষণা হতে পারে।
এদিকে, সম্প্রতি গোয়ার মারগাঁও বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ‘শার্ল দ্য গল’কে। ফ্রান্সের সবচেয়ে বড়, দুনিয়ার অষ্টম বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ এটি। আমেরিকার পর দুনিয়ার একমাত্র পরমাণু চালিত বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। ভারত-ফ্রান্স নৌমহড়ায় অংশ নিতে ভারতে এসেছে এই জাহাজ। জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে আছে ফরাসি নৌসেনার অন্যতম সেরা অস্ত্র, ‘রাফাল এম’। বায়ুসেনার রাফালের মতোই দেখতে এটি। দুটোই ফরাসি সংস্থা দাঁসো অ্যাভিয়েশনের তৈরি।
‘শার্ল দ্য গলে’ পেটের ভিতরে সুরক্ষিত রয়েছে রাফাল এম। এই অংশটার নাম টফি। জাহাজের আন্ডারগ্রাউন্ডের সবচেয়ে সুরক্ষিত অংশ এটি। বাঙ্কারও বলতে পারেন। প্রয়োজনে, ডানা ভাঁজ করে এখান থেকে অপারেশনে নামে রাফাল-এম। কিন্তু এই মেরিন রাফাল কী করবে? ফ্রান্স থেকে রাফাল- এম কেনার প্রয়োজনই বা কোথায়? একটা নয়, একসঙ্গে পাঁচটা টার্গেট নিয়ে রাফাল-এমকে চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্র ও নৌসেনা।
এক, জল থেকে জল ও আকাশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। দুই, ভারতের সীমায় মিসাইল হানার চেষ্টা হলে অ্যান্টি শিপ মিসাইলে তা ধ্বংস করা যাবে। তিন, জলের গভীরে সাবমেরিন বা ড্রোনকে খুঁজে ধ্বংস করা। এক্ষেত্রে রাফাল- এমের স্ট্রাইক রেট কমবেশি ৯০ শতাংশ। আমেরিকার যে কোনও ন্যাভাল জেটের তুলনায় যা অনেক বেশি। চার, এর মিসাইল সহ অন্য অস্ত্র বহনের ক্ষমতা বেশি। পাঁচ, রাফাল – এম থাকা মানে একইসঙ্গে জল ও আকাশে শক্রর ঢুকে পড়া কার্যত অসম্ভব। এয়ার সুপ্রিমেসি লেভেলও আমেরিকার সুপার হর্নেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে রাফাল- এম।
বোয়িংয়ের তৈরি সুপার হর্নেটের উল্লেখ করতেই হয়, কারণ একে পিছনে ফেলেই রাফাল- এম কেনার সিদ্ধান্ত হয়। যদি উন্নত যুদ্ধজাহাজ নিয়ে ভারতের উপর হামলা চালান হয়, আবার ঠিক সেই সময়েই যদি আকাশপথেও হামলা হয়, তাহলে রাফাল, সুখোই বা মিরাজ না হয় আকাশে শক্রর মোকাবিলা করবে। কিন্তু জলপথে হামলা সামাল দেওয়া বা পাল্টা হামলা চালানোর জন্যও তো নৌসেনার হাতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান থাকা দরকার। এই জায়গায় ভারতের ঘাটতি রয়েছে। তাই বহুদিন ধরেই রাফাল-এমের দাবি জানিয়ে এসেছে নৌসেনা।
আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতেই হবে। ভারতীয় বায়ুসেনা রাফাল ব্যবহার করছে। রাফালের অ্যাসেম্বলিং ও মেনটেন্স সেন্টারও প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে। রাফাল এম আর রাফালকে যমজ ভাই বললেও ভুল হয়না। তাই রাফাল সবদিক থেকেই পছন্দ ছিল নৌসেনার। এমন সময়েই রাফাল এম নিয়ে ভারতে মহড়ায় এল শার্ল দ্য গল। চলতি বছরের শুরুতে রাফাল এম চুক্তি হলে ২০২৮ সালে প্রথম বিমান ভারতের হাতে আসবে। আইএনএস বিক্রান্ত ও আইএনএস বিক্রমাদিত্য হল ভারতের দুই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। এই দুই যুদ্ধজাহাজ থেকে অপারেট করবে রাফাল এম। আর রাফাল এম হাতে আসা শুরু হলে সুখোই এমকে ২৯ যুদ্ধবিমানগুলো ধাপে ধাপে বসিয়ে দেওয়া হবে।